খুঁজুন
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড

ব্যক্তি-সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিধান রেখে অধ্যাদেশ অনুমোদন

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
ব্যক্তি-সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিধান রেখে অধ্যাদেশ অনুমোদন

সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত—এমন ব্যক্তি বা সত্তার কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং এসব ক্ষেত্রে কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়।

ওই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে।

তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ওই বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে ওই আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আগামীকাল সোমবার সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে।

চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের ঈদ-জামায়াত কমিটির প্রস্তুতিমুলক সভা অনুষ্ঠিত

মিজান লিটন
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ৬:৪৬ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের ঈদ-জামায়াত কমিটির প্রস্তুতিমুলক সভা অনুষ্ঠিত

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের ঈদ জামায়াত কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার বাদ এশা ডিসি অফিস সংলগ্ন কমিটির সভাপতি অ্যাড. সেলিম আকবরের চেম্বারে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঈদ জামায়াত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবরের সভাপতিত্বে ও জিপি অ্যাড. এ.জেড এম রফিকুল হাসান রিপন এর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আঃ রশিদ সর্দার, সহ-সভাপতি আঃ রশিদ মাষ্টার, ভিপি জিপি এ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন সরকার, এ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, গোলাম মর্তুজা আপেল চৌধুরী, মাওলানা জসিম উদদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মিজান লিটন, প্রচার সম্পাদক মো.শরীফ সরকার প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাড. সেলিম আকবর বলেন, আবহওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ জামাতের সাথে চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে আদায় করবো।

নামাজের সময় সঠিক সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। ঈদের জামায়াত নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে চলছে দানব ট্রাক্টর ও ভটভটি

শওকত আলী
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ৬:১৩ অপরাহ্ণ
জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে চলছে দানব ট্রাক্টর ও ভটভটি

চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সদরে অবৈধ ভাবে যন্ত্রচালিত মালবাহী বাহনের কারনে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কগুলো। একই সাথে এ সব নিয়ন্ত্রণহীন বাহনের কারণে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছেন এসব বাহনের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার গ্রামীণ সড়কে অবাধে চলছে সেচ যন্ত্রচালিত অবৈধ যানবাহন নামক ভটভটি। এছাড়া গ্রামীণ সড়কগুলোতে বেপরোয়া ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু, মাটি ও ইটবাহী ট্রাক্টর গুলো।

জমিতে আবাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত এসব ট্রাক্টরের কারণে বিভিন্ন সময়ে ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের সামনে দিয়ে এসব নিষিদ্ধ যান চলাচল করলেও এগুলো বন্ধ করার জন্য নেয়া হচ্ছে না স্থায়ী কোনো আইনগত পদক্ষেপ।

আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার প্রধান সড়কে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন চলছে সেচযন্ত্র চালিত অবৈধ ভটভটি। শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে এসব অবৈধ যানবাহন তৈরি করা হচ্ছে। তাদের নেই কোনো যান্ত্রিক ফিটনেস ও আইনিগত বৈধতা।

শাহরাস্তি উপজেলার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিবহন ব্যয় কমাতে ট্রাক ও পিকআপের বিকল্প এ বাহনে বালু, সিমেন্ট, কাঠ, সবজিসহ বিভিন্ন পন্য বহনে ব্যবহার হচ্ছে এ যন্ত্রচালিত দানব।

এছাড়া গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। কৃষি কাজের জন্য ভর্তুকি দিয়ে কেনা ইঞ্জিনের পেছনে ট্রলি সংযোগ করে ট্রাকের বিকল্প পন্য পরিবহনে এ যানের ব্যবহা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবারাহের কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি ও জমির মাঝেই নিজস্ব রাস্তা তৈরি করে ট্রাক্টর চলাচল করে।

চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ হোসেন জানান, সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা ভটভটি ও ট্রাক্টর নামক দানবের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটছে। বাস বা অটোরিকশায় চড়েও এসব যানবাহন দেখে যাত্রী সাধারন আঁতকে উঠতে হয়।

হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মামুন মিয়া জানান, ট্রাক্টরগুলো বন্ধ হচ্ছে না ইটভাটা মালিকদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য। তারা এই দানব বাহনকে জমি থেকে মাটি কাটার কাজে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করলে এসব বাহন সড়ক চলতে পারবে না।

হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ট্রাক্টর চলাচলে বিগত পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের সময় এ দানব ট্রাক্টর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও এখন আবার সড়কে চলছে এসব যন্ত্রচালিত বাহন। এসব বাহন বন্ধ না করলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামিণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মূখে পড়বে।

শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া এলাকার পরিবহন শ্রমিক আহসান হাবিব বলেন, ভটভটি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল ও তরিতরকারি আনা-নেয়া করা হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে অবৈধ ও অনিরাপদ এসব যান চলাচল করছে। খরচ বাঁচাতে মিনি ট্রাকের বিকল্প হিসেবে এই যানবাহন ব্যবহার করা হয়। এসব গাড়ির ব্রেক সিস্টেম ভালো না। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এই যানবাহন চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স। অনেক সময় মালপত্রসহ গাড়ি উল্টে পড়ে যত্রতত্র।

মেহের ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিটি যানবাহন বাজারে আসার আগে তাদের গতি, বেগ ও ব্রেকিং সিস্টেম বুয়েটে পরীক্ষা করে অনুমোদন নেয়া হয়ে থাকে। স্থানীয় ভাবে তৈরি করা এসব যানবাহন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় এগুলো কোন বাহনের পর্যায়ে পড়ে না।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই সভাপতি মো. বারাকাত উল্লাহ পাটওয়ারী বলেন, ট্রাক্টরে মাল পরিবহন ও চলাচল বন্ধে বহুবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কঠোর না হওয়ায় এসব দানব যান বাহন বন্ধ হচ্ছে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব বাহনের লাগাম টেনে ধরা দরকার।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ট্রাক্টরসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব যান স্থায়ীভাবে বন্ধে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র চালিত এসব বাহন কোনভাবেই সড়কে চলার অনুমতি নেই। জেলার যেসব থানা ও উপজেলায় এ ধরনের যানবাহন চলাচল করে, ওই সব থানার ওসি এবং ট্রাফিক পুলিশকে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ফরিদগঞ্জে দুধ উৎপাদন প্রকল্পের টাকা গেল কোরবানির পশুতে

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ৮:৪৭ অপরাহ্ণ
ফরিদগঞ্জে দুধ উৎপাদন প্রকল্পের টাকা গেল কোরবানির পশুতে

দুধের উৎপাদন কম দেশের এমন ৫০ উপজেলায় ১০০ সমবায় সমিতি গঠন করে সরবরাহ বাড়াতে ২০২২ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় দুটি দুগ্ধ সমিতির মাধ্যমে ১০০ জনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ঋণ বিতরণ হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে এসব ঋণ গ্রহীতা যাচাই বাছাইয়ে করা হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি। ঋণের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে অন্য খাতে। ৬১ জনের মাঝে অনুসন্ধান করে মিলেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২৯ জনই ঋণের টাকা কোরবানিতে বিক্রির জন্য পশু ক্রয়, অন্যের গোয়াল ঘর দেখিয়ে ঋণ নেয়া, কয়েকজনের নামের টাকা নিয়েছেন একজন। উপজেলা সমবায় দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে এই ধরণের অনিয়মের তথ্যের প্রাথমিক সত্যতা তারাও পেয়েছেন।

সম্প্রতি সময়ে উপজেলার দুটি দুগ্ধ সমিতির ঋণ গ্রহীতাদের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে ‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের সাথে মিল পাওয়া যায়নি অনেক ঋণ গ্রহীতার বাড়িতে। ঋণ বন্টন হয়েছে উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩ ইউনিয়নে।

চান্দ্রা দুগ্ধ সমবায় সমিতির ৫০জন বালিথুবা ইউনিয়নের। গাজীপুর দুগ্ধ সমবায় সমিতির ৫০জন হলেন সুবিদপুর ও পাইকপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাকী ১৩ ইউনিয়নে ঋণ পাওয়ার যোগ্য গ্রহীতা থাকলেও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দুটি সমিতিই গঠন হয় ২০২৩ সালে।

উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি চান্দ্রা বাজারে দুটি দুগ্ধ সমিতির ১০০ জন ঋণ গ্রহীতাদের মাঝে উন্নত জাতের গাভী ক্রয় করার জন্য ১লাখ ৬০ হাজার করে ঋণের চেক প্রদান করা হয়। প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল আহম্মদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এসব চেক ঋণ গ্রহীতাদের হাতে তুলেদেন। ঋণ বিতরণের প্রায় ৪ মাস পর অর্থাৎ এপ্রিল মাসেও অনেক ঋণ গ্রহীতা গাভী ক্রয় করেনি। তবে একজন গ্রাহক তার ঋনের টাকা ফেরত দিয়েছেন।

চান্দ্রা দুগ্ধ সমবায় সমিতি: এই সমিতির মাধ্যমে ঋণ পেয়েছেন ৫০ জন সদস্য। ঋণ গ্রহীতা ২৯ জনের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয়। এর মধ্যে ১৭ জন গাভী ক্রয় করেননি। ঋণের টাকা বিনিয়োগ করেছেন অন্য খাতে।

ঋনের টাকা যথাযথ বিনিয়েগের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি গ্রহীতা সকদীরামপুর গ্রামের সফিকুর রহমান, মদনেরগাঁও গ্রামের জহিরুল হকের। জহিরুল হক উপজেলা প্রাণী সম্পদ এর আওতায় একটি প্রকল্পে চাকরি করেন। তার মা ফয়েজুন্নেছা বলেন, ঋণের টাকা কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় গরু ক্রয় করেছেন।

সকদীরামপুর গ্রামের ঋণ গ্রহীতা নাজমা আক্তার। তার সাথে কথা হয়। তিনি জানেননা কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং কী কাজে। পরে জানালেন তার ভাই ইসমাইল জানেন এই বিষয়ে। জানা গেল ইসমাইল ফেলকন নামে আরেক সমিতির মালিক। তিনি নিজে এবং তার বোনের নামে ঋণ নিয়ে অন্য কাজে বিনিয়োগ করেছেন।

এসব ঋণ গ্রহীতা সকলে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের। এর মধ্যে মিনু বেগম, তফুরী বেগম, মো. নুর মিয়া, মো. ওয়াসিম হোসেন, ফাতেমা বেগম, নাছির উদ্দিন, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গাজী, মো. সেলিম মিয়া, ফাহিমা আক্তার ও রৌশন আরা বেগম গাভী ক্রয় করেননি। এদের মধ্যে ওয়াসিম হোসেন ঋণের টাকায় নিম্নমানের ওষুধ কিনে মজুদ করেছেন। স্থানীয় ফার্মেসীতে তিনি এসব ওষুধ বিক্রি করেন। তার বাড়িতে গিয়ে গোয়াল ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

ঋণ গ্রহীতা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। তিনি চান্দ্রা দুগ্ধ সমিতির সমন্বয়ক। তিনি নিজে, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম, ঋণ গ্রহীতা নুরুন্নাহার আক্তার লাকী ও মো. নাছির উদ্দিন ঋনের টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তাদের পূর্বের গরুর খামারে। লাকী ও নাছির উদ্দিনের গাভী দেখার জন্য বাড়িতে গেলে সকলে একই খামার দেখান। তাদের এই খামারে আছে ২৮টি ষাঁড় গরু। এসব ষাঁড় বিক্রি করবেন কোরবানির হাটে। এসব তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে ঋণ গ্রহীতা শাহাবুদ্দিন।

গাজীপুর দুগ্ধ সমবায় সমিতি: এই সমিতির মাধ্যমে ঋণ পেয়েছেন ৫০ জন সদস্য। ঋণ গ্রহীতা ৩৩ জনের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয়। এর মধ্যে ১৪ জনই গাভী ক্রয় করেননি। সমিতিরি ঋণ গ্রহীতা সাখাওয়াত হোসেন, রাজু হোসেন. মো. কাইয়ুম এর বাড়িতে গিয়ে গরুর কোন অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। তারা অন্যের গোয়াল ঘর দেখিয়ে ঋনের টাকা নিয়েছেন। তাদের বাড়ীর লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। সাখাওয়াত মুন্সিরহাট বাজারে জুতার ব্যবসায়ী, রাজু বাড়িতে থাকেন না এবং কাইয়ুম বালু ব্যবসায়ী। কাইয়ুম জানালেন, তিনি গোয়াল ঘর ঠিক করে গরু ক্রয় করবেন। গোবার চিত্রা গ্রামের মোহাম্মদ রাশেদ খান ও নুর হোসেন খানের বাড়িতে গিয়ে গোয়াল ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানালেন তারা কোন গরু ক্রয় করেননি।

পাশ্ববর্তী ঘড়িহানা গ্রামের সরদার বাড়িতে বেশ কয়েকজন নিয়েছেন ঋনের টাকা। তাদের আগ থেকে অনেকের গোয়ালঘর এবং বিভিন্ন ধরণের গরু আছে। এই বাড়ির জসিম উদ্দিন মিন্টু ছিলেন গাজীপুর দুগ্ধ সমিতির সমন্বয়ক। তিনি নিজ বাড়ির লোকদের এবং আশপাশের ১১ জনের ঋণ নেয়ার কাজে সহযোগিতা করেন। এদের মধ্যে অনেকেই আগ থেকে কোটি টাকা বিনিয়োগ করে খামার করেছেন।

জসিম উদ্দিন বলেন, এই ঋণ বিতরণের সময় সমিতিতে যাদের নাম ছিলো, চূড়ান্ত করার দিন তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা সমবায় অফিসার এবং ওই কার্যালয়ের কর্মচারিরা তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। ওইদিন আমি উপস্থিত হয়ে দেখলাম রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে সাহস করে কোন কথা বলতে পারিনি। যে কারণে ঋণের টাকা বিতরণে অনিয়ম হয়েছে।

এই সমিতির ঋণ গ্রহীতা সুখরঞ্জন, মরিয়ম বেগম, মো. সাইফুল, ফাতেমা বেগম, নাছিমা বেগম, জিয়াউল হক ও মো. আলমের বাড়িতে কোন গরু পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে ফাতেমা বেগম এর স্বামী সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। তাদের বাড়িতে কোন লোক নেই। থাকেন চাঁদপুর শহরে। সাইফুল ইসলাম নামে ঋণ গ্রহীতা দেখালেন তার ভাইয়ের গোয়াল ঘর।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঋণ বিতরণের জন্য দুটি সমিতির সদস্য যখন চূড়ান্ত হয়, তখন আমি এই উপজেলায় ছিলাম না। তবে ঋণ বিতরণ হয়েছে আমি দায়িত্বরত অবস্থায়। যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তাদের বিষয়ে আমরাও তদন্ত করে দেখছি। কেউ কেউ কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় ক্রয় করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের তদন্তে যাদের অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ ঋণের ২ লাখ টাকার মধ্যে ১লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও পরবর্তী ৪০ হাজার টাকা চেক বিতরণ অপেক্ষমান। এসব বিষয়গুলো সামনে রেখে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে হবে।

চাঁদপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, এই ঋণ বিতরণ সম্পর্কে আমি অবগত না। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এই ধরণের অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে। যারা ঋণের টাকা নিয়ে অনিয়ম করেছেন তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে নিদের্শনা আসবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শেখ বলেন, দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের এই প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ বিতরণ এবং নেয়ার ক্ষেত্রে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে অব্যশই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।