জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে চলছে দানব ট্রাক্টর ও ভটভটি


চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সদরে অবৈধ ভাবে যন্ত্রচালিত মালবাহী বাহনের কারনে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কগুলো। একই সাথে এ সব নিয়ন্ত্রণহীন বাহনের কারণে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছেন এসব বাহনের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার গ্রামীণ সড়কে অবাধে চলছে সেচ যন্ত্রচালিত অবৈধ যানবাহন নামক ভটভটি। এছাড়া গ্রামীণ সড়কগুলোতে বেপরোয়া ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু, মাটি ও ইটবাহী ট্রাক্টর গুলো।
জমিতে আবাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত এসব ট্রাক্টরের কারণে বিভিন্ন সময়ে ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের সামনে দিয়ে এসব নিষিদ্ধ যান চলাচল করলেও এগুলো বন্ধ করার জন্য নেয়া হচ্ছে না স্থায়ী কোনো আইনগত পদক্ষেপ।
আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার প্রধান সড়কে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন চলছে সেচযন্ত্র চালিত অবৈধ ভটভটি। শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে এসব অবৈধ যানবাহন তৈরি করা হচ্ছে। তাদের নেই কোনো যান্ত্রিক ফিটনেস ও আইনিগত বৈধতা।
শাহরাস্তি উপজেলার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিবহন ব্যয় কমাতে ট্রাক ও পিকআপের বিকল্প এ বাহনে বালু, সিমেন্ট, কাঠ, সবজিসহ বিভিন্ন পন্য বহনে ব্যবহার হচ্ছে এ যন্ত্রচালিত দানব।
এছাড়া গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। কৃষি কাজের জন্য ভর্তুকি দিয়ে কেনা ইঞ্জিনের পেছনে ট্রলি সংযোগ করে ট্রাকের বিকল্প পন্য পরিবহনে এ যানের ব্যবহা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবারাহের কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি ও জমির মাঝেই নিজস্ব রাস্তা তৈরি করে ট্রাক্টর চলাচল করে।
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ হোসেন জানান, সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা ভটভটি ও ট্রাক্টর নামক দানবের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটছে। বাস বা অটোরিকশায় চড়েও এসব যানবাহন দেখে যাত্রী সাধারন আঁতকে উঠতে হয়।
হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মামুন মিয়া জানান, ট্রাক্টরগুলো বন্ধ হচ্ছে না ইটভাটা মালিকদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য। তারা এই দানব বাহনকে জমি থেকে মাটি কাটার কাজে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করলে এসব বাহন সড়ক চলতে পারবে না।
হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ট্রাক্টর চলাচলে বিগত পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের সময় এ দানব ট্রাক্টর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও এখন আবার সড়কে চলছে এসব যন্ত্রচালিত বাহন। এসব বাহন বন্ধ না করলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামিণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মূখে পড়বে।
শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া এলাকার পরিবহন শ্রমিক আহসান হাবিব বলেন, ভটভটি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল ও তরিতরকারি আনা-নেয়া করা হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে অবৈধ ও অনিরাপদ এসব যান চলাচল করছে। খরচ বাঁচাতে মিনি ট্রাকের বিকল্প হিসেবে এই যানবাহন ব্যবহার করা হয়। এসব গাড়ির ব্রেক সিস্টেম ভালো না। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এই যানবাহন চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স। অনেক সময় মালপত্রসহ গাড়ি উল্টে পড়ে যত্রতত্র।
মেহের ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিটি যানবাহন বাজারে আসার আগে তাদের গতি, বেগ ও ব্রেকিং সিস্টেম বুয়েটে পরীক্ষা করে অনুমোদন নেয়া হয়ে থাকে। স্থানীয় ভাবে তৈরি করা এসব যানবাহন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় এগুলো কোন বাহনের পর্যায়ে পড়ে না।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই সভাপতি মো. বারাকাত উল্লাহ পাটওয়ারী বলেন, ট্রাক্টরে মাল পরিবহন ও চলাচল বন্ধে বহুবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কঠোর না হওয়ায় এসব দানব যান বাহন বন্ধ হচ্ছে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব বাহনের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ট্রাক্টরসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব যান স্থায়ীভাবে বন্ধে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র চালিত এসব বাহন কোনভাবেই সড়কে চলার অনুমতি নেই। জেলার যেসব থানা ও উপজেলায় এ ধরনের যানবাহন চলাচল করে, ওই সব থানার ওসি এবং ট্রাফিক পুলিশকে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন