খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২

ছাড়পত্র পেলেও কেন হাসপাতাল ছাড়ছেন না জুলাই যোদ্ধারা?

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ৮:৫৮ অপরাহ্ণ
ছাড়পত্র পেলেও কেন হাসপাতাল ছাড়ছেন না জুলাই যোদ্ধারা?

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে এমনও আছেন যাদের এখন আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বাসায় যাচ্ছেন না। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে সরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ছাত্র সমন্বয়কসহ সব পক্ষকেই।

বিভিন্ন সময়ে নানান মাধ্যমে খবর পাওয়া যায়, হাসপাতালে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হন আহতরা। আবার চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন তারা। গত ১০ মার্চ জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) স্টাফদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় ১০ জন আহত হন। ঘণ্টারও বেশি সময় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়েছিল। পুলিশ, ছাত্র প্রতিনিধি ও চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেটির সুরাহা করতে হয়েছে।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়েছে, ডিম কিনে এনে তা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ফ্লোরে ভেঙে পিচ্ছিল করে একে অপরকে টেনে-হিঁচড়ে আনন্দ করছেন জুলাই যোদ্ধারা। আবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে মামলার আসামি হয়েছেন এমন উদাহরণও আছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, জুলাই যোদ্ধারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে পরিবার ও সমাজে ফিরে গেলে, তাদের সঙ্গে মিশলে বা কর্মে যুক্ত হলে মানসিক আঘাত কেটে যাবে। অন্যথায় এভাবে দিনের পর দিন হাসপাতালে পড়ে থাকলে তাদের মানসিক অবস্থার উন্নতির বদলে অবনতি হবে। দেশীয় চিকিৎসকদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও একই মত দেন। কিন্তু আহতরা হাসপাতাল ছাড়তে নারাজ।

কারণ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় অনেকে আর্থিক সহায়তা পাননি। আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য সরকারের করা তিনটি ক্যাটাগরি নিয়েও অসন্তুষ্ট অনেকেই। এর সহজ ও দ্রুত সমাধান পাচ্ছেন না তারা। গত ১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হলেও এখনো আহত অনেকে এই কার্ড পাননি। যারা পেয়েছেন, তাদের কার্ডে অহরহ ভুল। এগুলোর সমাধানে দফায় দফায় ধরনা দিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না জুলাই যোদ্ধারা। হাসপাতালে থেকে তারা এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দপ্তরগুলোতে দৌড়াতে পারেন। কিন্তু বাসায় চলে গেলে দলচ্যুত হয়ে পড়বেন এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম ও উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধানে দেরি হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ৮ থেকে ১০ মার্চ যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছে। ১১৫ জন রোগী দেখেছেন, এর মধ্যে ২৩ জনের সার্জারি করেন।

১১ মার্চ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে ওই চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. মাহি মুকিত বলেন, ‘আন্দোলনে আহতদের যথাযথ মানসিক ট্রমার চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া অনেক রোগী পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে। এভাবে ইনস্টিটিউশনালাইজড হয়ে থাকা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যাদের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে, তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।’
পরদিন (১২ মার্চ) চক্ষু হাসপাতালের ৩২ জনকে ছুটি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মাত্র এক-দুজন বাড়ি গেছেন। বাকিরা হাসপাতাল ছাড়ছেন না।
চক্ষু হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া জুলাই যোদ্ধা বাপ্পী ইসলাম বলেন, ‘প্রতি রুম থেকে কয়েকজন করে রিলিজ দিছে। কেউ তো যায়নি। তবে আমি ১৬ মার্চ চলে এসেছি।’

একই হাসপাতালে ভর্তি আরেক জুলাই যোদ্ধা মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় জরুরি কাজে নিজ বাড়ি নরসিংদী গিয়েছিলেন। পরে রিলিজ দেওয়ার কথা শুনে আর হাসপাতালে যাননি।
এর বাইরে সবাই রয়ে গেছেন হাসপাতালে। কেন যাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে সামিরুল নামের একজন বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখে দেখি। কিন্তু এটাতেও সমস্যা হয় মাঝেমধ্যে। এখন ভালো আছি। ছুটি দিয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় ধাপের টাকা দিলে চলে যাবো। ঢাকায় থাকলে তো জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে যাওয়া-আসা যায়, গ্রাম থেকে আসা তো কঠিন।’

আরেকজন আহত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার তামিম মাহমুদ (১১)। সে এক চোখে দেখে, আরেক চোখে দেখে না। দুই মাস ধরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি। তাকেও ছুটি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যাচ্ছে না।

তার বাবা নুরুদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলেটা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুই মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আমাকে হাসপাতাল ছাড়তে হলে আগে বোঝাতে হবে- এখানে কী চিকিৎসা পেয়েছে? সিএমএইচে দেড় মাস, চক্ষুতে দুই মাস। অথচ সন্তোষজনক চিকিৎসা পাইনি। তার রগে বুলেট আছে এখনো। কেউ বের করতে রাজি না। বাংলাদেশের এরা পারবে না। তাহলে বিদেশ পাঠান। তাও করছে না।’

নুরুদ্দিন আরো বলেন, ‘আপনি আমাকে রিলিজ দিয়ে দিবেন, আপনি কি আমায় ডেকে আনছেন? আমার চিকিৎসার বুঝ না পাইলে যাবো না। বুঝিয়ে দিতে হবে। হেলথ কার্ড ও সহায়তা হলেই তো হবে না, উন্নত চিকিৎসা লাগবে।’

১২ মার্চ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে আমরা তাদের ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। অনেককে ছুটি দিয়েছি। ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যা করা দরকার আমার পক্ষ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে থাকার দরকার যাদের অপারেশন প্রয়োজন। কিন্তু তারা মনে করছে, এখানে থাকলে আমার চোখ লাল হলে, পানি পড়লে, ফুলে গেলে বা যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, সঠিক চিকিৎসা পাবো। এজন্য থাকে। আমরা সব মেডিকেল কলেজকে বলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এ ধরনের চিকিৎসা যাতে তারা দেয়। আর অপারেশনের প্রয়োজন হলে আমাদের এখানে পাঠাবে। এর বাইরেও আরেকটা বিষয় আছে, তারা মনে করে এখানে থাকলে সরকারের বা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সুযোগ-সুবিধাগুলো সরাসরি পাওয়া যায়। এজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি, সরকারি-বেসরকারি সব সুযোগ-সুবিধা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে জেলাভিত্তিক দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি, তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী পুনর্বাসন বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছি। এটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সময় লাগবে।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল বলেন, ‘রোগীরাও বোঝে, তাদের যতটুকু চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তার বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু তারা ভেতরে ভেতরে চায়, পুনর্বাসন। অনেকে মুখে বলে, অনেকে বলে না, তবে আকার ইঙ্গিতে বোঝা যায়। তাই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি, এখন পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।’
জানা গেছে, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি আছে ১২৬ জন। কিন্তু এক বিছানায় দুজন থেকে বা নানাভাবে ১৫০ থেকে ২০০ জন অবস্থান করেন।

একই চিত্র পাশের জাতীয অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের। সেখানেও ভর্তি আছেন ১০৭ জন। কিন্তু ২০০’র বেশি রোগী নানান সময়ে অবস্থান করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের সবার হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। এমন আহতদের হাসপাতাল ছাড়তে বললেও রাজি হচ্ছে না।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান বলেন, ‘এরা আসলে পরিপূর্ণ সুস্থ নয়। তবে সবার হাসপাতালে থাকা জরুরি নয়। আমি মনে করি, যাদের হাসপাতালে থাকা জরুরি নয়, তারা প্রয়োজনে ১৫ দিন বা এক মাস পরপর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বা ফলোআপ করবে। তারা পরিবারের সঙ্গে থাকলে জুলাই আন্দোলনের বিভীষিকায় পড়ে যে ট্রমা হয়েছে, এটার মানসিক উন্নতি হবে। চিন্তা-ভাবনা স্বাভাবিক হবে।’

ডা. আবুল কেনান বলেন, ‘আমাদের এখানে ২০-২৫ জন আছে যাদের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। আমরা তাদের সরাসরি তালিকা করে ছুটি দেইনি। এর আগে ছুটি দিয়েছিলাম, পরে আবার চলে আসছে। ফোর্স করে ছুটি দিলেই তো হবে না। কাউন্সিলিং করার চেষ্টা করছি। তাদের বুঝিয়ে রাজি করে বাড়ি পাঠাতে হবে। কারণ, এখানে গত ১০ তারিখ যেহেতু একটা অপ্রীতিকর ঘটনা (মারামারি) ঘটেছে। তাই, বুঝের মধ্যে সব করার চেষ্টা করছি।’

হাসপাতালে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা তামিম খানও এ বিষয়ে একমত যে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ হওয়া জুলাই যোদ্ধাদের মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পরিবার ও সমাজে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত ১২ মার্চ চক্ষু হাসপাতাল থেকে ৩২ জনকে ছুটি দেওয়া হয়। ৩১ জনই হাসপাতালে থেকে গেছে। তারা যাবে না। এটার মূল কারণ হচ্ছে, চক্ষু ও অর্থপেডিক হাসপাতালে প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এই আর্থিক সহযোগিতার একটা অংশ এই রোগীরা পায়। যার কারণে তারা হাসপাতাল ছাড়তে চাইছে না। এটা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। আমরা অনেক চেষ্টা করছি, তাদের বোঝাতে। তারা কোনো কথা শোনে না, বরং মারতে আসে। তাদের সুবিধার জন্য আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছি, হাসপাতালে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিচ্ছি। সব ধরনের সহযোগিতা জেলাভিত্তিক আমরা পৌঁছে দেব।’

চক্ষু হাসপাতালে ২০০ রোগী এবং অর্থপেডিকে তারও বেশি অবস্থান করছে উল্লেখ করে তামিম খান জানান, এমনিতেই তো তারা ট্রমাটাইজড। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার ফলে তাদের আরও মানসিক অসুস্থতা তৈরি হচ্ছে। পরিবার থেকে দূরে। মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে না। হাসপাতাল তো থাকার জায়গা নয়। ওখানে সুস্থ মানুষ থাকলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা। মেডিসিনের গন্ধ ও প্রভাব আছে। প্রত্যেক দিন নানা ধরনের রোগী দেখছে। বাসায় চলে গেলে বরং পরিবার ও সমাজের সঙ্গে মিশে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।

এর বাইরে সিআরপি, সিএমএইচ ও নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে গণঅভ্যুত্থানে আহত কিছু রোগী আছে। তবে সেসব হাসপাতালে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি এবং প্রয়োজনেই তারা সেখানে থাকছেন।

ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৫০ অপরাহ্ণ
ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল ২২ দিনের ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা। এসময় নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে নদীতে নামবেন জেলেরা।

শেষ সময়ে কেউ মেরামত করছেন নৌকা, কেউবা পুরোনো জাল সেলাই করে নিচ্ছেন নতুন করে। চোখে মুখে আনন্দের অনুভূতি থাকলেও আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। তারা বলছেন, এবছর ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। আর এখন মৌসুম শেষ। জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলে কষ্টের পাল্লা ভারী হবে।

এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন চাঁদপুরে নিবন্ধিত ৪৫ হাজার ৬১৫ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু তা ছিল জেলেদের কাছে অপ্রতুল। ওই সময় জীবিকা হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েন জেলেরা।

এদিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ ধরতে না গেলেও নিষেধাজ্ঞার পর বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে এবং মহাজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে বলে আক্ষেপ করেছেন।

তাদের অভিযোগ, মূল জেলেদের কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে। অথচ যারা মাছ ধরতে জীবনেও নদীতে নামেনি এমন বিভিন্ন পেশার বেশ কিছু মানুষ সরকারী সহায়তার কার্ড পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকি বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা পেয়েও সরকারের নির্দেশনা না মেনে অবৈধভাবে নির্বিচারে মা ইলিশ শিকার করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে সরকারের পরবর্তী সহযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ারও আহ্বান জানান।

মৎস্য কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার গত বছরের চেয়ে মাছের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে পারে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকার করতে দেওয়া হয়নি। এবার রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ উৎপাদন হতে পারে।

তিনি আরও জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।

এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো ৪৪৫ টি অভিযানে ৭৭ টি মামলা ও ৭৪ টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১১৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ৬ কোটি মিটার অবৈধ জাল, ১১০০ টন ইলিশ জব্দ করে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রদান করাহয়।

জনশ্রুতি আছে অভিযানে সময় অনেক জেলে সরকারের বরাদ্দ করা চাল পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার মধ্যরাতে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই উপকূলের জেলেরা জাল, নৌকা, ট্রলার ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। বিশেষ করে হরিনা ঘাট, আখনের ঘাট, পুরানবাজার রনাগোয়াল, লঞ্চ ঘাট, হাইমচরের নীলকমল, মতলব উত্তর মোহনপুর নৌঅঞ্চলের জেলেরা এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত যৌথবাহিনি। এ ঘটনায় দুই মাদক কারবারি পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করা হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের ছোট বাড়ি এলাকা থেকে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর আর্মি ক্যাম্পের অপারেশনাল অফিসার লেফটেন্যান্ট জাবিদ হাসান ও ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রাজিব চক্রবর্তী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকদিরামপুর গ্রামের খলিল বেপারির ছেলে মাদক কারবারি আল-আমিন (২৫) ও তার সহযোগী হত্যা মামলার আসামি রুবেল হোসেন (২৮) ফজরের নামাজের পর একটি প্রাইভেটকারে করে বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে আসে। পরে আল-আমিনের বাড়ির গোসলখানায় গাঁজাগুলো লুকিয়ে রাখে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

পরে এলাকাবাসী পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দিলে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।

এলাকাবাসী জানায়, রুবেল হোসেন এর আগে একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। গত ১০ দিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আবারও মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একই ইউনিয়নের বাইক্কারবাগানের পাশের ডোবা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী সোহেল হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে মামলার অন্যতম আসামি ছিল রুবেল হোসেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন স্বপন মিয়াজী জানান, সকালে ফজরের নামাজের পর এলাকাবাসী আমাকে জানায়, এ এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি রুবেল জেল থেকে বের হয়ে আবারও মাদক কারবারির সাথে জড়িয়ে পড়েছে এবং বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ এলাকায় প্রবেশ করলে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানা পুলিশকে খবর দেই। তিনি আরো জানান, তাদের কারনে এ এলাকার যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্ আলম বলেন, সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ডিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করি। তবে মূল মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। আল-আমিনের বাবা খলিল বেপারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ধানের শীষ প্রতীকের গণসংযোগ শুরু করলেন ইঞ্জি. মমিনুল হক

মো. ইউসুফ বেপারী
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:২১ অপরাহ্ণ
ধানের শীষ প্রতীকের গণসংযোগ শুরু করলেন ইঞ্জি. মমিনুল হক

হাজীগঞ্জে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে নিজ ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করলেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জি. মমিনুল হক।

শুক্রবার দিনব্যাপী তিনি উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেন। এরমধ্যে তিনি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা, উত্তর রায়চোঁ, বড়কুল রামকানাই উচ্চ বিদ্যালয়, রায়চোঁ বাজার, মধ্য বড়কুল, আড়ুলি, মোল্লাডহর, দিকচাইল, সেন্দ্রা ও কোন্দ্রা এলাকায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

পথসভায় ইঞ্জি. মমিনুল হক চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে ইউনিয়নবাসীর সম্মতি চাইলে উপস্থিত লোকজন একযোগে হাত উঁচিয়ে সম্মতি প্রকাশ এবং ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এসময় তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির ২২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় গণসংযোগ ও পথসভা কার্যক্রম শুরু করলাম। দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। তারা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করে তারেক রহমানকে আগামির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাছান মিয়াজীর সভাপতিত্বে গণসংযোগ ও পথসভায় সফর সঙ্গী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী, বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের মিয়া, ইঞ্জি. জাহাঙ্গীর আলম, ইমান হোসেন, অহিদুল ইসলাম মোহন, আব্দুল গফুর পাটওয়ারী, ওলি উল্যাহ, আলমগীর হোসেন, মোশারফ হোসেন, তাফাজ্জল হোসেন বতু, শাহাদাত হোসেন মিলন, জামাল মেম্বার, মিজানুর রহমান, মাসুদ রানা, উপজেলা মৎসজীবি দলের সভাপতি মো. ইমান হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম চৌধুরী মিঠু, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক এসএম ফয়সাল হোসাইন, পৌর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব দ্বীন ইসলাম টগর, ছাত্রনেতা শামছুদ্দিন খাঁন নূর, কবির হোসেন রাজু, ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল জব্বার, ইকবাল বেপারী, ইমাম হোসেন, আব্দুল মতিন, আলাউদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, হোসেন মজুমদার, স্বেচ্ছাসেবক নেতা মাসুম চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, সুমন রাজ, হাসানাত, সোহাগ, কৃষক নেতা মিজানুর রহমান, ছাত্রনেতা আলামিন দিনু, হাবিবুর রহমান, ওসমান গণি, সাব্বির হোসেন, শেখ ফরিদসহ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।