খুঁজুন
বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ়, ১৪৩২

ফেনীতে বন্যা

‘স্বপ্নের ঘর ভেসে গেলো, কিছুই করতে পারলাম না’

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ৮:১০ অপরাহ্ণ
‘স্বপ্নের ঘর ভেসে গেলো, কিছুই করতে পারলাম না’

বিকেল থেকেই ঘরের পাশের বন্যা রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল মুহুরী নদীর পানি। এলাকার সবাই মিলে নদীরক্ষা বাঁধের ওপর বিভিন্ন ধরনের বস্তা দিয়ে পানি গড়ানো বন্ধ করার চেষ্টা করছিলাম। পুরো বিকেলজুড়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করেছি। সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখি আমার ঘরের পাশেই বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

অবস্থা বেগতিক দেখে মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয়ে রেখে আসি। সন্ধ্যার মাঝেই বাঁধভাঙা পানির তীব্র চাপে ঘরের একটি অংশ ভেঙে তলিয়ে যায়। একে একে ঘরের দেওয়াল, পিলারসহ ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখেছি। স্বপ্নের ঘর পানির তোড়ে ভেসে যেতে থাকলেও দেখে দেখে কান্নাকাটি করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমার।

বুধবার বিকেলে এসব কথা বলছিলেন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির আলী আশরাফ। মুহুরী নদীর পানির চাপে তার নবনির্মিত আধাপাকা ঘরটি বিলীন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতি বুধবার পর্যন্ত আরও অবনতি হয়েছে। ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক এখন পর্যন্ত হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পাড়ার সড়ক, অলিতে-গলিতেও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।

বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ও নদীতে পানির পরিমাণ কমলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙায় লোকালয়ে পানি বাড়ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীরক্ষা বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে দুই উপজেলায় ২৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আরও নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বেড়িবাঁধের পরশুরামের ১০টি স্থানে এবং ফুলগাজী উপজেলার পাঁচটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।

প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে পরশুরামে ১৫টি ও ফুলগাজীতে ১২টি গ্রাম রয়েছে। প্লাবিত এসব গ্রামের পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে পানি বাড়ায় ফেনী-পরশুরাম অঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‌চব্বিশের বন্যায় আমাদের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এর মাঝেই আবার বন্যার কবলে পড়েছি। বাড়ির সামনের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, বীজতলা তলিয়ে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে গেছে। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সর্বস্ব হারাতে বসেছি। আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধান চাই।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী ও কহুয়া নদীর ১৫টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখনো নদীর পানি বিপ‌দসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করলেও বাঁধভাঙা পানির চাপে লোকালয়ে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় ভারী বৃষ্টি কমলেও বুধবার দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার একাংশে এরইমধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে দেড় হাজার ব্যক্তি বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। তাদের খাবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

পরশুরাম উপজেলা ৯৯, ফুলগাজীতে ৩২ এবং ফেনী সদর উপজেলায় ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় দুই হাজার ৫৩৭ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

জেলায় এরইমধ্যে ত্রাণ কাজের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিসি বলেন, ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ফুলগাজী ও পরশুরামে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ২৯ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার ফুলগাজী, পরশুরামে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তার বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়নি।

এসএসসির ফল কাল, অপেক্ষা ফুরোচ্ছে ১৯ লাখ পরীক্ষার্থীর

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ৮:২৭ অপরাহ্ণ
এসএসসির ফল কাল, অপেক্ষা ফুরোচ্ছে ১৯ লাখ পরীক্ষার্থীর

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশ করা হবে। এদিন দুপুর ২টায় স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ড ফল প্রকাশ করবে। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ও নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফল জানতে পারবেন। মোবাইল ফোন থেকেও নির্ধারিত নম্বরে এসএমএস করে ফলাফল জানা যাবে।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি ঢাকা বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ফলাফল পুরোপুরি প্রস্তুত। টেকনিক্যাল বিষয়গুলোও সব যাচাই শেষ। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় একযোগে ফল ঘোষণা করা হবে।

ফল প্রকাশের পর তা নিয়ে গত বছরও শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ তুলেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফলাফল তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারে করা হয়। ফলে খাতা দেখে পরীক্ষকরা যে নম্বর দিয়েছেন, তা বসিয়ে হিসাব কষতে কোনো ত্রুটি হওয়ার কথা নয়। তারপরও কারও ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে সে পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন করতে পারবে।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর ২টায় প্রকাশ করা হবে। ফল প্রকাশের পর তিনভাবে শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানতে পারবেন।

প্রথমত, শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট-এ এবং নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে নিজেদের রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ব্যক্তিগত ফল জানতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, তারা নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ফলাফল জানতে পারবেন। শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নির্ভুলভাবে ফল জেনে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয়ত, ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ফল জানতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি অক্ষরে লিখতে হবে এসএসসি> বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর> রোল নম্বর> পরীক্ষার সাল। এরপর তা পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।

উদাহরণস্বরূপ- ঢাকা বোর্ডের একজন পরীক্ষার্থীকে লিখতে হবে SSC> DHA> Roll Number>2025। এটি পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।

বিগত বছরগুলোতে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হতো। প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশের ঘোষণা দিতেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সচিবালয় অথবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী সব বোর্ড চেয়ারম্যানকে নিয়ে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরতেন।

তবে এবার সেই নিয়মে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকছে না। বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ঢাকা বোর্ডে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের ফলাফল সম্পর্কে জানাবেন। ঠিক দুপুর ২টায় স্ব স্ব বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে ফল ঘোষণা করবেন।

এসএসসির ফল প্রকাশের পরের দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে নির্ধারিত নিয়ম মেনে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। এ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত।

শুধু টেলিটক সিম ব্যবহার করে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফি লাগবে ১৫০ টাকা। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে- RSC <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। একাধিক বিষয়ের কোড লিখতে হলে কমা (,) দিয়ে আলাদা করতে হবে। যেমন- ১০১,১০২।

চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন এবং ছাত্র ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন।

যদিও পরীক্ষার প্রথম দিনেই সারাদেশের ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী। পরে এ অনুপস্থিতির সংখ্যা আরও বেড়েছিল। সবমিলিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী।

চাঁদপুরে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

শওকত আলী
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
চাঁদপুরে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুরে বেড়েছে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ। কখনো মাঝারি, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী হাজার-হাজার মানুষ। বিশেষ করে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় অনেকের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে এবং ছোট-ছোট শিশুদেরকে নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মহল্লাবাসীকে।

গত সোমবার, মঙ্গলবার রাত থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চাঁদপুর শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় সাধারন মানুষজন দুর্ভোগে পড়ে রয়েছে।

সরজমিনে বুধবার সকালে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড, নাজির পাড়া, পালপাড়া, আলিমপাড়া, রহমতপুর কলোনীসহ বেশ কিছু সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতা রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার হাজার-হাজার বাসিন্দারা।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গেল বছরের মতো জলাবদ্ধতায় শিকার হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্যদিকে যাত্রী সংকটে লঞ্চ চলাচলে সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। যাত্রী পেলে ২ ধেকে ৩ ঘন্টার পর ছাড়ছে ঢাকাগামী যাত্রীবাহি লঞ্চগুলো।

চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসাইন জানান, অতি বৃষ্টির কারণে দোকানের সামনে হাটু সমান পানি জমে আছে। যার কারণে কোন ক্রেতা আসতে পারছে না। বৃষ্টি চলমান থাকলে দোকানে পানি ঢুকে যাবে। তখন আরো বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।

শহরের মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা আলম খান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছেনা।

চাঁদপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা শাহ মো. শোয়েব জানান, গত ৪৮ ঘন্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯ ঘটিকা পর্যন্ত তা বেড়ে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঞ্চল অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ সব অঞ্চলের হাজার-হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। তারা অতিকষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

এ ছাড়া চাঁদপুর সদর-হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা এলাকার কয়েকটি স্থানের মাছের ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষিদের লাখ-লাখ টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

বিশেষ বিসিএস

৩২ বছরের বেশি বয়সী চিকিৎসকদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ৭:০৯ অপরাহ্ণ
৩২ বছরের বেশি বয়সী চিকিৎসকদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে নির্দেশ

৪৮তম বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসকদের মধ্যে থেকে ৩২ বছরের বেশি বয়সীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পিএসসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশ শুধু রিট আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়স ৩২ বছর থেকে ৩৪ বছর কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব।

চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রিটকারীদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদ এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিসিএস ক্যাডারদের বয়স বাড়ানোর দাবি দাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে আসছে। তারপরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি ও নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।

আদেশের বিষয়ে রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব বলেন, বিসিএসে আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা যখন ৩০ বছর ছিল, তখন চিকিৎসকরা (স্বাস্থ্য ক্যাডারে) ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পেতেন। চাকরিপ্রার্থীদের দাবির মুখে সম্প্রতি সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে। অথচ চিকিৎসকদের বয়সসীমা রাখা হয়েছে ৩২ বছরেই।

চিকিৎসকরা এটিকে চরম বৈষম্য বলে মনে করছেন। তারা চিকিৎসকদের আবেদনের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার দাবি তুলেছেন। ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরুর আগেই এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন পরীক্ষার্থীরা।

গত ১৮ নভেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে বিসিএসে যেহেতু আগে চিকিৎসকরা দুই বছর বেশি সময় পেতেন, সেজন্য তারা আশা করেছিলেন বিসিএসে তাদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করা হতে পারে। কিন্তু গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের মতো চিকিৎসকদের বয়সসীমাও সর্বোচ্চ ৩২ বছর রাখা হয়। বিষয়টি চিকিৎসকদের বৈষম্যমূলক মনে করছেন।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসক সমাজের পক্ষে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন।

গত ৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেন তারা। তাছাড়া ৮ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান, ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর কাছেও লিখিতভাবে দাবি তুলে ধরেন।

এদিকে, চিকিৎসকদের দাবি সম্বলিত লিখিত আবেদন পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার বিষয়টি বিবেচনা করতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট করেন ১০ জন বিসিএস পরীক্ষার্থী। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে চিকিৎসকদের যুক্তিতে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, বিসিএসে আবেদন করতে সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক পাস হওয়ার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে স্নাতক শেষ করতে চার বছর সময় লাগে। অথচ চিকিৎসকদের এমবিবিএস ও বিডিএসে স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে ন্যূনতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর সময় প্রয়োজন হয়।

এজন্য আগের সব বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩০ বছর রাখা হলে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। বৈষম্য দূর করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এখন চিকিৎসকদের বয়সসীমা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ করা জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।