প্রায় পাঁচ হাজার রোগীর রক্তের জোগান দিয়েছে টিটু হোসেন


টিটু হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮ নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রামদাসেরবাগ গ্রামের সাধারণ এক পরিবারে জন্ম তার। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। অযত্নে বড় হওয়া এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবাকে করেছেন নিজের পণ হিসেবে।
ফরিদগঞ্জে যেকোনো অসুস্থ মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলেই মানুষ মনের অজান্তে হলেও টিটুকে খুঁজে বেড়ায়। টিটু নিজেও রক্ত দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তবে তিনি রক্তের জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছেন স্বেচ্ছাসেবার সকল হিসাব নিকাশ। প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি রোগীর জন্য রক্ত ম্যানেজ করেছেন টিটু।
জীবনের কঠিন মূহুর্তে সহজে রক্ত জোগান পাওয়া কতটা স্বস্তির বিষয় সেটা একজন রোগী এবং রোগীর পরিবার ভালো ভাবেই জানে। আর সে কাজটিই সাফল্যের সাথে করে আসছেন টিটু হোসেন।
ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে ফরিদগঞ্জের আনাচে কানাচের তরুণদের সাথে পরিচিত টিটু হোসেন। সহজে তার কথায় উৎসাহিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নেমে পড়ে।
তিনি অসাধারণ একজন কঠোর পরিশ্রমী স্বেচ্ছাসেবী হওয়ায় তিনি ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র সমাজ কল্যান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যের সাথে। তার স্বেচ্ছাসেবী মানসিকতার কারনে তাকে পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিডি ক্লিনের মতো সু-পরিচিতি সমাজসেবী সংগঠনের হয়েও তিনি চাঁদপুরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এছাড়াও ফরিদগঞ্জের প্রায় ৮-১০ টি সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
মানুষের জীবন বাঁচানোর অন্যতম উপাদান রক্ত জোগানের কাজের পাশাপাশি তিনি মানুষের যেকোনো বিপদে মাঠে নেমে পড়েন। করোনাকাল, বন্যা সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ গুলোতে যুবকদের একত্রিত করে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে।
গরিব ও অসহায় মানুষের যেকোনো বিপদে তিনি মাঠে নেমে পড়েন। ফরিদগঞ্জের ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত হওয়ায় ধনী ব্যক্তিরা টিটু হোসেনের ডাকে সাড়া দিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ায়। টিটু হোসেন প্রমান করেছেন মানুষের পাশে থাকতে হলে ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই, সুন্দর একটি মন হলেই যথেষ্ট। টিটু হোসেন নিজের টাকায় মানু্ষকে সাহায্য করতে না পারলেও মানুষের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে ধনীদের মাধ্যমে গরিবদের অসহায়ত্ব দূর করেন।
কিছুদিন আগে টাকার অভাবে বিয়ে দিতে না পারা এক কন্যার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে বিয়ের খরচ জোগান দেন টিটু, সেই কন্যার বাবা আঃ জব্বার বেপারী বলেন, আমার পুত্র সন্তান নেই, আমি একজন দরিদ্র মানুষ। মেয়ের বিয়ে দিবো সে জন্য দিশেহারা হয়ে গিয়েছি। টিটু মূহুর্তের মধ্যেই বেশ কয়েকজন ধনী মানুষের কাছ থেকে নিজে হাত পেতে আমার বিপদের মূহুর্তে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি মনে করতাম আমার ছেলে নেই কিন্তু সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি টিটু আমার ছেলে।
টিটু নিজেও এই বাবাদের কষ্ট দূর করে বাবার আদর না পাওয়ার তৃপ্তি দূর করেন।
এ বিষয়ে টিটু হোসেন বলেন, আমি ছোট থেকেই মানুষের দুঃখ্য কষ্ট সহ্য করতে পারি না। আমি নিজেও গরিব কিন্তু আমার বিশ্বাস অনেক মানুষই দান করার জন্য তৈরি থাকেন কেবল গরিবদের সমস্যা গুলো সততার সাথে তুলে ধরতে হবে এবং লোভ না করে সেবা করে যেতে হবে। আমি মানুষের পাশে থেকে আনন্দ পাই। আমি প্রত্যেকদিন অন্তত একজন মানুষের কোনো না কোনো উপকার করতে না পারলে শান্তি পাই না। এই নেশার কারনে আমি আসলে নিজের পেশাগত কাজেও অনেক সময় মনোযোগ দিতে পারি না। আমি নিজেও গরিব হওয়ায় গরিবের দুঃখ বুঝি।
আপনার মতামত লিখুন