খুঁজুন
রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫, ১৭ কার্তিক, ১৪৩২

আগস্টে ঘোষণা হতে পারে হজ প্যাকেজ, খরচ কমাতে চায় সরকার

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ৭:০১ অপরাহ্ণ
আগস্টে ঘোষণা হতে পারে হজ প্যাকেজ, খরচ কমাতে চায় সরকার

সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের (২০২৬ সাল) হজের কার্যক্রম বেশ আগেভাগেই সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হজের এত আগে নিবন্ধন সম্পন্ন করে প্যাকেজের টাকা সৌদি প্রান্তে পাঠানো বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া রয়েছে অন্য কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের চাপ।

এরই মধ্যে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে সৌদি সরকার আগামী হজের কোটা জানিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো আগামী বছরও বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। যদিও গত দুই হজে কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধন চললেও রোডম্যাপ অনুযায়ী, এবার ১২ অক্টোবরের মধ্যে প্যাকেজের পুরো টাকা নিয়ে হজের নিবন্ধন শেষ করতে হবে। সেবা প্যাকেজের (তাঁবু ভাড়া ও মাশায়ের প্যাকেজ) প্রয়োজনীয় অর্থ সৌদিতে পাঠাতে হবে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে।

আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে সেবা গ্রহণের চূড়ান্ত চুক্তি করতে হবে। একই সঙ্গে মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ি বা হোটেল এবং পরিবহন চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্থানান্তর শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজচুক্তি সই ‍হবে ৯ নভেম্বর। রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে কোনো কাজ সম্পন্ন না হলে হজ পালন অনিশ্চিত হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।

চলতি বছরের হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন রোববার (২৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে। চলতি বছর হজ হয়েছিল ৫ জুন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার।

আগামী হজ সামনে রেখে এখন প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে সরকারের বড় কাজ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তারা এখন সৌদি প্রান্তের খরচ ও দেশে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণের অপেক্ষা করছেন। আগস্টের মধ্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।

এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এর ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিগুলো।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী হজেও দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা নিয়ে কাজ হচ্ছে। সাধারণ প্যাকেজ হিসেবে প্যাকেজ-১ এর খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে। চলতি বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। আগামী বছর তা দেড় লাখের নিচে নামিয়ে আনতে চায় মন্ত্রণালয়।

এ প্যাকেজের ভিত্তিতেই এজেন্সিগুলো তাদের প্যাকেজ নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে, সরকারি প্যাকেজ-২ হবে বিশেষ প্যাকেজ। এ প্যাকেজে হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। খরচও হবে বেশি। এ প্যাকেজের খরচ হবে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এ প্যাকেজের বাড়ি বা হোটেল থাকবে হারাম শরিফের ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে।

চার লাখ টাকা দিয়ে রোববার (২৭ জুলাই) থেকে প্রাথমিক নিবন্ধন করা যাচ্ছে। তবে হজ এজেন্সি মালিকরা এর বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, প্রাথমিক নিবন্ধনে চার লাখ টাকা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে সাড়া কম পাওয়া যাবে। কারণ, হজের এত আগে একসঙ্গে এত টাকা দেওয়া অনেকের জন্য কষ্টকর। এছাড়া প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজে গমনেচ্ছুরা জানতে পারছেন না, এবার হজ পালন তার সাধ্যের মধ্যে থাকছে নাকি থাকছে না।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘হজ হচ্ছে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বিষয়। তারা রোডম্যাপ দিয়েছে। এটা নিয়ে আমরা হাবের সঙ্গে বসেছি। হজ প্যাকেজ ঘোষণাসহ যে সব কাজ রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে করতে হবে। একটু আগেই এবার এগুলো করতে হবে।

তিনি বলেন, সৌদি প্রান্তের খরচের হিসাব না পাওয়া ও বিমান ভাড়া নির্ধারিত না হওয়ায় আমরা প্যাকেজটা করতে পারছি না। সৌদি প্রান্তে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কাছে চুক্তি, মিনা-আরাফায় তাঁবু ভাড়া, বাড়ি ভাড়া আগেই করতে হবে।

সৌদি প্রান্তের খরচের হিসাব পাওয়ার পর প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, সৌদি আরবে আমাদের হজ মিশন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমাদের এদিকেও কিছু কাজ রয়েছে। বিমান ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি রয়েছে। বিমান ভাড়া নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। খরচগুলো পেলে যত দ্রুত পারি নির্বাহী কমিটি সভায় বসে প্যাকেজ ঘোষণা করে দেবো।

‘প্যাকেজ আগস্টের মধ্যেই করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি’ বলেন আফতাব হোসেন প্রামাণিক।

ধর্ম সচিব আরও বলেন, আমরা চাই হজের খরচ কমুক, যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পায়। ওই প্রান্তের ও আমাদের প্রান্তের খরচ যদি কমাতে পারি তাহলে খরচ কমবে।

‘অনেকে একটা বিশেষ প্যাকেজ নেওয়ার কথা বলেছে। তারা বলেছেন আরও কাছাকাছি থাকতে চান। ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে করা যায় কি না আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা এটা নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবো। কিছু কিছু মানুষ আছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হারাম শরিফে পড়তে চান, এজন্য তারা বেশি খরচ করতেও রাজি।’

ইতোমধ্যে সৌদি সরকার আমাদের কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আগামী বছরের হজে বাংলাদেশের কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে সৌদি সরকার কোটা জানিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমাদের কোটা এটাই ছিল।’

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এবার সৌদি সরকারের যে টাইমলাইন (রোডম্যাপ), সেটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। গত বছর থেকে এবার সময় এগিয়ে এসেছে। আমাদের হজযাত্রীদের তো মাথায় থাকে যে, হজের দু-তিন মাস আগে সব করবেন। কিন্তু সৌদি সরকার এবার ছয় মাস আগেই সব কাজ শেষ করতে চাইছে। এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, এবার হাজিরা বলছেন, আরও কাছে থাকতে চাইছেন। বেশি সুযোগ-সুবিধা চান তারা। তাই প্যাকেজ-২ বিশেষ প্যাকেজ হিসেবে রাখার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। প্যাকেজ-১ এ তিন কিলোমিটারের মধ্যে হোটেলের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা হাজিদের দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে পেরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য হাজিদের দূরে রাখা যাবে না। এবারও এটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে। আমরা হাজিদের সেবাটা নিশ্চিত করতে চাই।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘সৌদি রোডম্যাপের পরিপ্রেক্ষিতে এবার কিছুটা তো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে নিবন্ধনের সময় যে চার লাখ টাকা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে, এটা একটু বেশি। মানুষের তো প্রাথমিকভাবে এত টাকার প্রস্তুতি থাকে না। আমাদের দাবি ছিল এ টাকাটা দুই ভাগে নেওয়ার জন্য। প্রাথমিক টাকা যাতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে থাকে। এটা হজযাত্রীদের দাবি।’

এবার কোরবানি ও খাবার সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে নিচ্ছে- এর বিরোধিতা করে হাব মহাসচিব বলেন, ‘এটা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের হাজিরা কেউ ৫০০ রিয়াল দিয়ে কোরবানি দেন, কেউ পনেরশ’ রিয়াল দিয়েও দেন। কোরবানিটা তো যার যার সামর্থ্যের বিষয়। একই ফরম্যাটে রাখলে তো সমস্যা দেখা দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আর মিনা ও আরাফায় সৌদি কর্তৃপক্ষ তিন-চারদিনের খাবার দিতো, এটা নিয়েই হজযাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের খাবারটা মানে ভালো নয়। তারা যদি এক মাস ধরে খাবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে হাজিদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা মন্ত্রণালয়ও জানে। আশা করি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকার এ বিষয়গুলো সুরাহা করবে।

যেভাবে করা যাবে প্রাথমিক নিবন্ধন:

আগামী বছরের (২০২৬) হজের প্রাথমিক নিবন্ধন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালে হজে গমনেচ্ছুক ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে চার লাখ টাকা জমা দিয়ে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে এ বছরের ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন ও পরবর্তীসময়ে হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে।

সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা ই-হজ সিস্টেম, লাব্বাইক মোবাইল অ্যাপ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয়, জেলা ও বায়তুল মোকাররম অফিস এবং আশকোনা হজ অফিস থেকে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবে। তবে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।

রামপুরে বিদ্যাঘর পাঠাগার উদ্বোধন

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
রামপুরে বিদ্যাঘর পাঠাগার উদ্বোধন

“বই পড়লে আলোকিত হই, না পড়লে অন্ধকারে রই” বইয়ের সঙ্গেই গড়ে উঠুক সুন্দর সমাজ এই স্লোগানে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের বদরখোলা বাজারে বিদ্যাঘর পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়েছে। যুব সমাজকে মাদক ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পাশাপাশি গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান এই পাঠাগারের মূল উদ্দেশ্য।

শুক্রবার ৩১ অক্টোবর বিকালে বদরখোলা বাজারে বিদ্যাঘর পাঠাগার ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগীও সমাজসেবক মাওলানা জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী।


বিদ্যাঘর পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যাঘর পাঠাগারের সচিব আমিরুল ইসলাম রিয়াজের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম মাষ্টার, সাবেক সহকারী উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মমিনুল হক রাজাপুরী, নাসিরকোট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ শরীফুল্লাহ।

এছাড়াও এলাকার নবীণ প্রবীণ ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বিদ্যাঘর পাঠাগারের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যাতে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন মনিষীদের বই পাঠাগারে রাখতে হবে। পাশাপাশি ইসলামী জ্ঞান চর্চার জন্য ইসলামী বই সংরক্ষণ করতে হবে।

ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৫০ অপরাহ্ণ
ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল ২২ দিনের ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা। এসময় নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে নদীতে নামবেন জেলেরা।

শেষ সময়ে কেউ মেরামত করছেন নৌকা, কেউবা পুরোনো জাল সেলাই করে নিচ্ছেন নতুন করে। চোখে মুখে আনন্দের অনুভূতি থাকলেও আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। তারা বলছেন, এবছর ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। আর এখন মৌসুম শেষ। জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলে কষ্টের পাল্লা ভারী হবে।

এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন চাঁদপুরে নিবন্ধিত ৪৫ হাজার ৬১৫ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু তা ছিল জেলেদের কাছে অপ্রতুল। ওই সময় জীবিকা হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েন জেলেরা।

এদিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ ধরতে না গেলেও নিষেধাজ্ঞার পর বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে এবং মহাজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে বলে আক্ষেপ করেছেন।

তাদের অভিযোগ, মূল জেলেদের কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে। অথচ যারা মাছ ধরতে জীবনেও নদীতে নামেনি এমন বিভিন্ন পেশার বেশ কিছু মানুষ সরকারী সহায়তার কার্ড পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকি বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা পেয়েও সরকারের নির্দেশনা না মেনে অবৈধভাবে নির্বিচারে মা ইলিশ শিকার করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে সরকারের পরবর্তী সহযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ারও আহ্বান জানান।

মৎস্য কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার গত বছরের চেয়ে মাছের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে পারে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকার করতে দেওয়া হয়নি। এবার রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ উৎপাদন হতে পারে।

তিনি আরও জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।

এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো ৪৪৫ টি অভিযানে ৭৭ টি মামলা ও ৭৪ টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১১৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ৬ কোটি মিটার অবৈধ জাল, ১১০০ টন ইলিশ জব্দ করে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রদান করাহয়।

জনশ্রুতি আছে অভিযানে সময় অনেক জেলে সরকারের বরাদ্দ করা চাল পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার মধ্যরাতে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই উপকূলের জেলেরা জাল, নৌকা, ট্রলার ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। বিশেষ করে হরিনা ঘাট, আখনের ঘাট, পুরানবাজার রনাগোয়াল, লঞ্চ ঘাট, হাইমচরের নীলকমল, মতলব উত্তর মোহনপুর নৌঅঞ্চলের জেলেরা এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত যৌথবাহিনি। এ ঘটনায় দুই মাদক কারবারি পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করা হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের ছোট বাড়ি এলাকা থেকে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর আর্মি ক্যাম্পের অপারেশনাল অফিসার লেফটেন্যান্ট জাবিদ হাসান ও ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রাজিব চক্রবর্তী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকদিরামপুর গ্রামের খলিল বেপারির ছেলে মাদক কারবারি আল-আমিন (২৫) ও তার সহযোগী হত্যা মামলার আসামি রুবেল হোসেন (২৮) ফজরের নামাজের পর একটি প্রাইভেটকারে করে বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে আসে। পরে আল-আমিনের বাড়ির গোসলখানায় গাঁজাগুলো লুকিয়ে রাখে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

পরে এলাকাবাসী পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দিলে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।

এলাকাবাসী জানায়, রুবেল হোসেন এর আগে একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। গত ১০ দিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আবারও মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একই ইউনিয়নের বাইক্কারবাগানের পাশের ডোবা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী সোহেল হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে মামলার অন্যতম আসামি ছিল রুবেল হোসেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন স্বপন মিয়াজী জানান, সকালে ফজরের নামাজের পর এলাকাবাসী আমাকে জানায়, এ এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি রুবেল জেল থেকে বের হয়ে আবারও মাদক কারবারির সাথে জড়িয়ে পড়েছে এবং বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ এলাকায় প্রবেশ করলে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানা পুলিশকে খবর দেই। তিনি আরো জানান, তাদের কারনে এ এলাকার যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্ আলম বলেন, সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ডিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করি। তবে মূল মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। আল-আমিনের বাবা খলিল বেপারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।