কুরবানি কি? আপনার উপর কুরবানি ওয়াজিব কিনা? কুরবানির ফযিলত।


আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দটি উর্দূ ও ফার্সীতে (قربانى) কুরবানি নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ হলো নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরআনুল কারিমের কুরবানির একাধিক সমার্থক শব্দের ব্যবহার দেখা যায়।
نحر অর্থে। আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ এবং কুরবানি আদায় করুন। এ কারণে কুরবানির দিনকে يوم النحر বলা হয়।
نسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআ’ম : আয়াত ১৬২)
منسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, ‘ لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।
الاضحى অর্থে। হাদিসের ভাষায় অর্থে কুরবানির ঈদকে (عيد الاضحى) ‘ঈদ-উল-আজহা’ বলা হয়।
কোরবানি কখন কার জন্য আবশ্যক?
প্রাপ্তবয়স্ক, মানসিকভাবে সুস্থ মুকিম (মুসাফির নয়) এমন প্রত্যেক নর-নারীর কোরবানি করা ওয়াজিব, যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে। টাকাপয়সা, সোনা, রূপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে লাগে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
নিসাবের পরিমাণ হলো, স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ ভরি এবং রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ ভরি। টাকাপয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর একত্র মূল্যের পরিমাণ সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সমান হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে। (আল মহিতুল বুরহানি, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া)
কোরবানির ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে যেকোনো সময় নিসাবের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে)
নাবালক, পাগল, মুসাফির নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া শামি)
কুরবানির ফজিলত:
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জায়দ ইবনে আকরাম বলেন, সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করেন, কুরবানি কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত।’এতে আমাদের সওয়াব কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কুরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব রয়েছে। ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ভেড়ার প্রত্যেকটি পশমের বদলায়ও একটি করে সওয়াব রয়েছে।( মুসনাদে আহমাদ)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর নিকট ওদের গোশত রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ্জ- ৩৭)
মোঃ আরিফ হোসাইন
এডভোকেট
জজকোর্ট, চাঁদপুর।
আপনার মতামত লিখুন