শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড জাতীয় অর্থনীতিকে অচলের নীলনকশা: কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশন


ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ঘাটতির বড় ইঙ্গিত দিয়েছে।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইতোমধ্যে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে পুলিশের সব ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে নেমে গভীরভাবে তদন্ত শুরু করেছে। তারা খতিয়ে দেখছে—এসব অগ্নিকাণ্ড নাশকতা, নাকি নিছক দুর্ঘটনা।
গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের একটি পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু, ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) আদম ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানা, টঙ্গীর কেমিক্যাল গুদাম এবং ১৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন—এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অতীতের নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বেইলি রোড ট্র্যাজেডি প্রমাণ করেছে—অগ্নিনিরাপত্তায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় যেমন প্রাণহানি ঘটছে, তেমনি হাজার কোটি টাকার সম্পদও পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, এই অগ্নিকাণ্ড দেশের শিল্পকারখানা, আমদানি-রফতানি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিপর্যস্ত করে জাতীয় অর্থনীতিকে অচল করার একটি ‘পরিকল্পিত নীলনকশার’ অংশ হতে পারে।
রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, শনিবারের আগুনে বিমানবন্দরের আমদানি পণ্যের গুদাম ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে গুদামটি সম্পূর্ণ অচল অবস্থায় রয়েছে। সংস্কার ছাড়া সেখানে আমদানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব নয়। “এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পঙ্গু করার অপচেষ্টা হতে পারে,” বলেন তিনি।
পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশনটি:
১. ঘটনাটির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন।
২. তদন্তে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অগ্নিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করে আধুনিকায়ন।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ।
৫. নির্মাণাধীন নতুন গুদাম অস্থায়ীভাবে চালু করে আমদানি কার্যক্রম সচল রাখা।
অ্যাসোসিয়েশনটি আরও জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দেশের অর্থনীতিকে অচল করার কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না—তা গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন। প্রায় সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন লাগার কারণে বিমানবন্দরে সাত ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিকল্পভাবে সিলেট ও চট্টগ্রামে অবতরণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাত ৯টার দিকে ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হলেও রবিবারও ফ্লাইট বিলম্বের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে ট্রানজিট যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
আপনার মতামত লিখুন