খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ়, ১৪৩২

বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বৈঠক: ভারতের জন্য কৌশলগত বার্তা?

আলোকিত চাঁদপুর ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ৯:১৯ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বৈঠক: ভারতের জন্য কৌশলগত বার্তা?

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের অংশগ্রহণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আয়োজিত এই বৈঠকে তিন দেশ একটি সম্ভাব্য জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গত বৃহস্পতিবার চীনের কুনমিং শহরে আয়োজিত ‘নবম চায়নাসাউথ এশিয়ান এক্সপো’ এবং ‘ষষ্ঠ চায়নাসাউথ এশিয়া কো-অপারেশন ফোরাম’-এর সাইডলাইনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।

বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, তিন দেশ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব, সমতা, পারস্পরিক আস্থা, উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই সঙ্গে তারা বহুপক্ষীয়তা ও উন্মুক্ত আঞ্চলিকতার পক্ষে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানায়। তিন দেশই নিশ্চিত করেছে, এই উদ্যোগ কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়।
বৈঠকে অবকাঠামো, যোগাযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, কৃষি, সমুদ্রনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এসব খাত চিহ্নিত করে পারস্পরিক সমঝোতা বাস্তবায়নে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, এই আলোচনার গন্তব্য এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘ত্রিদেশীয় যে আলাপ শুরু হয়েছে, সেটি এখনো খুব স্পষ্ট নয় যে তারা কী করতে চায়। বেশ কিছু বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হলেও শেষপর্যন্ত কতদূর এগোয় সেটাই দেখার বিষয়।’

তবে তার মতে, এই উদ্যোগের পেছনে প্রতিবেশী শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও থাকতে পারে। কারণ, এই তিন দেশের কারও সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে খুব একটা ভালো নয়।
মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ভারতকে দেখানোর একটা প্রয়াস থাকতে পারে যে, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে অনেক কিছু করা সম্ভব। ভারতকে নাড়া দিয়ে দেখা যে তারা এগিয়ে আসে কিনা। এর আগেও বিসিআইএম করিডোর বন্ধ হয়ে যায় ভারতের অনাগ্রহেই, সার্কও অচল হয়ে আছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলুল হালিম রানা এই ত্রিপক্ষীয় কাঠামোকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা হিসেবে দেখছেন। তার মতে, ‘এই তিন দেশের সঙ্গেই ভারতের আস্থা সংকট রয়েছে সীমান্ত ইস্যু, কাশ্মীর প্রসঙ্গ এবং আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রশ্নে।’

ফজলুল হালিম রানা বলেন, ‘জোটটি যদি কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে বড় কোনো সংকট তৈরি নাও হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চীন এমন কাঠামোকে প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক কূটনীতি হিসেবে উপস্থাপন করলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হতে পারে।’ এতে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক একটি নতুন বলয়ের উত্থান ঘটতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ড. ফজলুল হালিম আরও বলেন, ‘পশ্চিমা শক্তিগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান এই উদ্যোগকে চীনের প্রভাব বিস্তারের কৌশল (ইনফ্লুয়েন্স প্রজেকশন) হিসেবে দেখছে। ফলে এটি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার পাশাপাশি ব্লক রাজনীতির পুনরুত্থানের ইঙ্গিতও বহন করতে পারে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপকের মতে, ভারত কোয়াড, বিমস্টেক ও আইওআরএর মতো কাঠামোর মাধ্যমে একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করছে, যেখানে চীনের অংশগ্রহণ নেই। ফলে চীন বিকল্প কাঠামো তৈরিতে আগ্রহী, বিশেষ করে এমন দেশগুলোকে নিয়ে যাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক সুযোগ, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায়। আর বাংলাদেশের জন্য এটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদারের একটি সম্ভাবনা।’

অধ্যাপক ফজলুলের ভাষায়, ‘ভারতের আগমুহূর্তে এই কাঠামোর উত্থান এবং এতে ভারতের অনুপস্থিতি নিছক উন্নয়নমূলক কোনো উদ্যোগ নয়; বরং এটি কৌশলগত বার্তা পাঠানোর প্রচেষ্টা এই বিশ্লেষণ অনেক পর্যবেক্ষকই করছেন।’

চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পেছনে রয়েছে একাধিক আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে এই উদ্যোগকে ভারত কীভাবে দেখবে, এবং তা দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে কী প্রভাব ফেলতে পারে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা অনেকে মনে করছেন, ত্রিপক্ষীয় এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক বাস্তবতা, বিদ্যমান সম্পর্ক ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এহসানুল হক বলেন, ‘এই ধরনের জোটে যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি সুপরিকল্পিত হোমওয়ার্ক করতে হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ছাড়া কৌশলগত এমন পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, অবশ্যম্ভাবীভাবে ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসবে এটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে ভারত সেটা ইতিবাচকভাবে নেবে না। ভারতের দিক থেকে এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হবে এমনটা ভাবাও কঠিন। ফলে এই পরিস্থিতি সামলানো বাংলাদেশের জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

এহসানুল হকের মতে, ‘এই ধরনের জোটে যোগ দেওয়ার আগে সুবিধা-অসুবিধাগুলো বাস্তবভিত্তিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ, ভারতের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তান উভয়েরই ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক বৈরি সম্পর্ক রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে আগাতে হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বৈঠকটিকে ‘অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, আঞ্চলিক শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ত্রিদেশীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পারস্পরিক সমঝোতার বিষয়গুলো বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা জানানো হয়েছে।
বৈঠকের পর শুক্রবার চীন ও পাকিস্তান পৃথক বিবৃতি দিলেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় একদিন পর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বৈঠকটিকে ‘অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, আঞ্চলিক শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিবৃতিতে জানানো হয়, সহযোগিতা জোরদারে অবকাঠামো, যোগাযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, সমুদ্রবিষয়ক কার্যক্রম, তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ কয়েকটি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘এই উদ্যোগ কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়’—এ কথাটিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
পাকিস্তানের বিবৃতিতে জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্খার কথা তুলে ধরে বলা হয়, চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে ইসলামাবাদ আগ্রহী।

তিন দেশের বিবৃতিতেই ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তের কথা পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ চীন থেকে ৮ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং চীনে রপ্তানি করেছে ৪৬১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরে চীন থেকে মোট আমদানি মূল্য ছিল ১৬ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭১৫ মিলিয়ন ডলার।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এরপরও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান প্রতিবেশী ভারত এখনও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কিছুটা উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ছে, ভিসা নীতি শিথিল হচ্ছে এবং বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে গড়ে ওঠেনি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম।

বিআরটিএ সেবা গ্রহিতাদের পদে পদে ভোগান্তি

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ৭:১৯ অপরাহ্ণ
বিআরটিএ সেবা গ্রহিতাদের পদে পদে ভোগান্তি

গাড়ির নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, নম্বর প্লেট লাগানো ও মালিকানা হস্তান্তরসহ সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চাঁদপুর কার্যালয়ে। এই কার্যালয়ে আসলে দালালদের দেখলে মনে হবে তারা দপ্তরেরই কর্মচারি। কর্মচারিদের সাথে বাহিরের লোকদের যোগসাজসে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই দপ্তর। এই ধরণের অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের। কর্তৃপক্ষ বলছে এসব অনিয়ম পর্যায়ক্রমে সমাধান করার চেষ্টা করবেন।

সরেজমিন এই কার্যালয়ে কয়েকদিন অবস্থান করে সেবা নিতে আসা লোকজন, দালাল চক্রের সদস্য ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই দপ্তরে সরকারি কর্মচারি ৩জন। কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন মটরযান পরিদর্শক এবং অপরজন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার)। এছাড়া দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক একজন কর্মচারি কাজ করেন। এদের বাহিরে দালাল হিসেবে অফিসের চেয়ার টেবিল ব্যবহার করে কাজ করেন মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক ও মোহাম্মদ আলী।

এসব দালালের বাহিরেও গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজ করার বিনিময়ে দালালি করার জন্য আসেন অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রিপন ও ট্রাক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা মন্টু।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারি জিয়া হক হলেন অফিসের সকল অনিয়মের সমন্বয়ক। তাকে সহযোগিতা করেন শহীদ, শাহজাহান, আলী ও মানিক।

মঙ্গলবার ভোরে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে এসেছেন প্রায় দুই শতাধিক সেবা গ্রহীতা। এদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তি বলেন, সরকারি ফি পরিশোধ করার পরেও নানা রকম ভুল দেখিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলে খুব সহজেই কাজ হয়ে যায়।

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা একজন গ্রাহক বলেন, চাঁদপুরের সুমাইয়া মটরস এর মাধ্যমে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার লাইসেন্সের পাওয়ার ক্ষেত্রে সব কাজ তারা করে দিবেন।

এছাড়াও শহরের যে কয়েকটি মটর সাইকেল বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, সবগুলোর বিক্রয় কর্মী কিংবা ম্যানেজারই হচ্ছেন এই দপ্তরের দালাল। তারা মটরসাইকেলের নিবন্ধন প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা দেন বিআরটিএর দপ্তরে। বিআরটিএর কার্যালয়ে হাতেনাতে পাওয়াগেছে শহরের স্টেডিয়াম রোডের হিরো নিলয় মটরসাইকেল সোরুমের ম্যানেজার নয়নকে।

এই বিষয়ে একাধিক মটরসাইকেল বিক্রয় কেন্দ্রের বিক্রয় কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিআরটিএর অফিস অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে তারাও প্রতিকার চান।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে আসা লোকজন প্রতিসপ্তাহের নির্ধারিত দিনে এই কার্যালয়ে আসেন। সেখানে থাকে একাধিক দালাল। নম্বর প্লেট লাগানোর কাজ করেন মোহাম্মদ আলী। তিনি হলেন দালালদের একজন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কপ্লেক্সের ভেতরে উপআনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের পিয়ন এবায়েদুল হক। তিনি ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে আসা লোকদের কোন জামেলা ছাড়া লাইসেন্স করে দেয়ার চুক্তি করেন। হাতে নাতে তাকে পাওয়া যাই এই কাজে।

এবায়েদুল হক বলেন, আমি ভোর ৬টায় আসি। এখানে যারা আসেন তাদের কাজের চুক্তি করে দিলে ২০০টাকা করে পাই। তিনি তাৎক্ষনিক সরকারি টেলিফোন ব্যবহার করে দালাল আলীকে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় তলায়। আলী সাংবাদিক দেখে কেটে পড়ে।

দুইদিন এই দপ্তরে অবস্থান করলে দপ্তরের অধিকাংশ দালাল স্থান ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। দালালদের মধ্যে মানিকের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি এখন কাজ করি না। চিকিৎসার জন্য আসছি। এমনিতে অফিসের সামনে বসে আছি।

দপ্তর ছেড়ে চলে যান দালাল শহীদ। তিনি বলেন, ভাই আমার বিষয়ে কিছু লেইখেন না। আরেক দালাল শাহজাহান। তিনি প্রাইভেটকার দিয়ে পরীক্ষা নেন। সেখানে জনপ্রতি নেন ২০০টাকা। তিনি আবার ক্ষমতাদর আত্মীয় স্বজনের পরিচয় দেন। তাকে দেখলে মনে হবে অফিসের বড় বাবু।

হাতে নাতে ধরা পড়া দালাল মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি এই দপ্তরের কোন পদে চাকরি করেন। সে এলোমেলো উত্তর দিয়ে কেটে পড়েন। মূলত তিনি কাজ করেন নম্বর প্লেট লাগানোর। সেখানেও লোকদের জিম্মি করে ২০০ টাকার স্থলে নেন ৪০০টাকা।

এই অফিসের দৈনিক হাজিরার কর্মচারি জিয়া হক। সরেজমিন চিত্র ধারণ ও তথ্য নেয়ার সময় তিনি বার বার এই প্রতিবেদককে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আরেক সাংবাদিক দিয়ে ফোন করান কেন বিআরটিএর দপ্তরে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকের কাজ কি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দপ্তরের অনিয়মের চিত্র আনতে গেলে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেন জিয়া হক। সকল অনিয়মগুলো তার কাছে স্পষ্ট। দালালদের মাধ্যমে জিয়া হকই সকল কাজ সম্পন্ন করেন। তার শক্তি হিসেবে আছে কথিত কয়েকজন সাংবাদিক। তাদের নিজস্ব সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও গাড়ি আছে। সেগুলো নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি। তাদের এসব অনিয়ম চাপা রাখার জন্য এই কাজে যুক্ত থাকেন।

জিয়া হক বলেন, আমি কোন অনিয়মে নাই। আমি সবার সাথে খুব ভালো আচরণ করি।

দপ্তরের অধিকাংশ সময় উপস্থিত থাকেন মটরযান পরিদর্শক আলা উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বিগত ৫ মাস আগে এই কার্যালয়ে যোগ দিয়েছি। অনিয়ম থাকতে পারে। তবে আমার চোখে পড়ে না।

বিআরটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি দুই জেলার দায়িত্বে। লক্ষ্মীপুর জেলায় কাজ করতে হয়। আবার চাঁদপুর কার্যালয়ে আসি। এই কার্যালয়ের যেসব অনিয়মের কথা জানতে পেরেছি, খোঁজ খবর নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবো।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চাঁদপুরে রক্তদান কর্মসূচী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ৭:০৩ অপরাহ্ণ
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চাঁদপুরে রক্তদান কর্মসূচী

বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রাঙ্গনে চাঁদপুর ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর আয়োজনে ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব বছর বছর নয়। এই সরকারের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে নির্বাচন দেয়া। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন দিন। জনগনের প্রতিনিধির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করুন। ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিন। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবেন না। আর যদি বিলম্ব হয় তাহলে এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

চাঁদপুর ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি ডা. মোবারক হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ড্যাবের সংগঠক ডা. সৈয়দ আহমেদ কাজল ও ডা. নূরে আলমের যৌথ পরিচারনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের উপাধক্ষ্য ডা. হারুনুর রশীদ, সহকারী পরিচালক ডা. আশ্রাফ আহমেদ চৌধুরী, কাডিলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মীর মুনতাকিম হায়দার, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শরীফ উদ্দিন পলাশ, চাঁদপুর জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. কোহিনুর রশীদ, সদর উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন সাগর, পৌর বিএনপির সদস্য মীর আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরুল আমিন খান আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মাসুদুর রহমান মাঝি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমান হোসেন গাজী, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সফিউদ্দিন বাবলু, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. জিসান আহমেদ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. সোহেল গাজীসহ আরো অনেকে।

মেঘনা থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ৬:৫৩ অপরাহ্ণ
মেঘনা থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাতনামা (২০) বয়সী নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে আলু বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানান চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম ইকবাল।

পুলিশ জানায়, ২ জুলাই সন্ধ্যায় একটি মোবাইল নম্বর এর মাধ্যমে আলুর বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে সংবাদ প্রদান করেন সদরের ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের দক্ষিণ পাশে মেঘনা নদীর তীরে একটি অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ পড়ে আছে।

সংবাদের ভিত্তিতে আলুর বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সাধারণ ডায়েরি অনুযায়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ সংঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আনুমানুনিক রাত ৮ টার দিকে ঘটনাস্থল হতে স্থানীয় সাক্ষী ইশানবালা গ্রামের মৃত দুদু মিয়ার মেয়ে সাথী আক্তারের সহায়তায় মৃতদেহটি তীরে উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় সুরতহাল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখাগেছে মৃতদেহটি একজন অজ্ঞাতনামা যুবতী নারীর। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা ও মুখমণ্ডল গোলাকার। মৃতার পরনে কোনো পোশাক পাওয়া যায়নি। নাকে একটি স্বর্ণের নাকফুল রয়েছে। তবে কানে দুল ও হাতে কোনো গহনা পরিহিত ছিল না। মাথায় কালো রঙের লম্বা চুল রয়েছে। মাথা, কপাল, ঠোঁট, গলা, পিঠ, পেট, কোমর ও অন্যান্য অঙ্গ স্বাভাবিক দেখা গেছে।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম ইকবাল বলেন, মরদেহের পরিচয় শনাক্তকরণ ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের লক্ষ্যে পিবিআই চাঁদপুর ইউনিটকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।