শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে


শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে পড়াশোনার ক্ষতি—এমন নানা যুক্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুলগুলোতে স্মার্টফোন নিষিদ্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি অলসতা ও বিভ্রান্তির নতুন পথ খুলে দিয়েছে বলেও অভিভাবক ও শিক্ষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ২৭ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়া শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করার আইন পাস করেছে। এর আগে চীন, ফিনল্যান্ডসহ একাধিক দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বহু অঙ্গরাজ্যও বিভিন্ন মাত্রায় এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি স্রেফ প্রযুক্তিবিরোধী মনোভাব নয়। শিশু-কিশোররা সবসময় নিজেদের কল্যাণের বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে গণিত বা অন্যান্য পাঠে ফোন সরিয়ে রাখলেও প্রযুক্তি শেখার সুযোগ নষ্ট হবে না; শ্রেণিকক্ষের বাইরে ও নির্দিষ্ট পাঠে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
ভারতের এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, শ্রেণিকক্ষে ফোন নিষিদ্ধ করলে ফলাফলে সামান্য হলেও উন্নতি হয়। তিন বছর ধরে ১৭ হাজার উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীকে নিয়ে করা ওই ‘র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল্ড ট্রায়াল’-এ দেখা যায়, সবচেয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে।
ইংল্যান্ড ও স্পেনের গবেষণাতেও একই ধরনের ফল মিলেছে, যদিও সুইডেনের এক গবেষণা ভিন্ন চিত্র দেখিয়েছে।
শিক্ষাবিদেরা মনে করছেন, পরীক্ষার ফলাফল উন্নতির পাশাপাশি ফোনের ব্যবহার সীমিত করলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক চাপও কমে আসে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একসময় শিক্ষার্থীরাই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, সবাই যখন ফোন ব্যবহার করে, তখন আলাদা হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে গেলে তারা সামাজিকভাবে বঞ্চিত বোধ করে। কিন্তু সমষ্টিগতভাবে ফোন সরিয়ে দিলে আর কিছু মিস করার থাকে না।
বিশ্বজুড়ে যখন শিক্ষার মানোন্নয়ন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণকে তুলনামূলক সহজ সমাধান হিসেবে দেখছেন নীতিনির্ধারকেরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে। এক সময় হয়তো তারাই স্কুলের এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন