কচুয়ার এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ
চাঁদা না দেওয়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতার ভাইকে রাজনৈতিক মামলায় পাঠালেন জেল হাজতে


চাঁদপুর কচুয়া থানার এস আই জাহাঙ্গীরের চাঁদাবাজি, হয়রানির শিকার হয়ে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তার চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয় উল্লেখ করে ২৮ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কচুয়া উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে যুব অধিকার নেতা শাহজালাল পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ প্রদান করেন।
অভিযোগ সূত্রে ও সরজামিনে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার ১১ নং গোহাট দক্ষিণ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত. হারুনুর রশিদের ছেলে শাহজালালের বড় ভাই দিনমজুরে ইলেক্ট্রিশিয়ান মোস্তফা কামালকে ২২ মে গভীর রাতে ঘর থেকে ওসির বরাত দিয়ে এস আই জাহাঙ্গীর ধরে নিয়ে যান।
সকালবেলা পরিবারের লোকজন থানায় গেলে এসআই জাহাঙ্গীর তাদের কাছ থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে পরবর্তীতে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বলেন।
টাকা না দেওয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ৪ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখের চাঁদপুর ফয়সাল মার্কেটের হামলা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের মারধরের ঘটনায় ২৭শে আগস্ট চাঁদপুর মডেল থানার জি আর ৫৮৫ দায়ের করা রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেন।
শাহজালাল জানায়, ছোটবেলায় আমাদের বাবা মারা গিয়েছে, আমরা ৪ ভাই ১ বোন। ভাইদের মধ্যে মোস্তফা কামালই বড়, তিনি ইলেকট্রিক কাজ করে অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে বড় করেছেন। আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও ছোটখাটো ব্যবসা করেন। আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, ২০১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলাম। কিন্তু আমার কোন ভাই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। ৫ আগস্টে যদি স্বৈরাচার হাসিনার পতন না হতো তাহলে আমার নামে ৮-১০ টি মামলা থাকতো, অথচ দুঃখজনক বিষয় হলো সত্য, একটি কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্র এসআই জাহাঙ্গীর আমার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
দাবীকৃত ৩০ হাজার টাকা না দেওয়ায় আমার নিরপরাধ ভাইকে চাঁদপুরের মামলায় এরেস্ট দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। আমি আমার দলীয় নেতা কর্মীদেরকে নিয়ে পুলিশ সুপার বরাবর এসআই জাহাঙ্গীরের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি, আশা করি তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ওই ইউনিয়নের বিএনপি’র সাবেক ও বর্তমান একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, মোস্তফা কামাল কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়, সে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান দিনমজুরে খেটে খাওয়া মানুষ, যেহেতু সেই ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি, সে দল মত নির্বিশেষে সবার বাসা বাড়ি, অফিসে ইলেক্ট্রিক কাজই করতেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
কচুয়ার যুব অধিকার নেতা মহিউদ্দিন জানান, মোস্তফা কামাল কোনো রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত নয়, তিনি একজন নিরীহ শ্রমজীবী মানুষ। অথচ, তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র চাঁদা না দেওয়ার কারণে! আমরা এমন চাঁদাবাজ পুলিশ চাই না। আমরা দেশের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে সৎ সাহসী পুলিশ চাই।
চাঁদপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মাহমুদুল হাসান জানান, শাহজালাল ২০১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার নিরহ ভাই মোস্তফা কামাল’কে পুলিশ অন্যায় ভাবে আটক করে যে মামলায় দিয়েছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি এবং বলেছি তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, তিনি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
চাঁদপুর-২ কচুয়া আসনে গণআধিকার পরিষদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কচুয়র কৃতি সন্তান গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হাসিব বলেন, আমি বিষয়টি শুনে ওসির সাথে কথা বলেছি, তিনি এস আই জাহাঙ্গীরের এ ধরনের অনতিক কর্মকান্ডে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন।
কচুয়ার গণ-যুব-ছাত্র অধিকারের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আগামী ২৪ ঘটনার মধ্যে এসআই জাহাঙ্গীরকে ক্লোজ করতে হবে অন্যথায় রাজপথে নামতে বাধ্য হবো। ২৪-এর বাংলাদেশে আমরা চাই জনতার পুলিশ নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক এবং জনগণের বিশ্বস্ত সাথী।
এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকের পরিষদের সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বীর তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে এসআই জাহাঙ্গীরের অপসারণ দাবি করেন এবং তিনি আরো লিখেন, ‘এই রাষ্ট্র আমাদের স্বপ্নের বাস্তবতা, তাই রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ যেন হয়ে ওঠে জনগণের শক্তির প্রতিচ্ছবি। পুলিশের ইউনিফর্মে যেন প্রতিফলিত হয় জনগণের সম্মান, বিশ্বাস, ও সুরক্ষা। কিন্তু কিছু অল্প সংখ্যক অসাধু, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সদস্যদের কারণে সমগ্র পুলিশ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো। জনতার টাকায় পরিচালিত এই বাহিনীর একমাত্র কর্তব্য হবে জনসেবা, ন্যায় ও মানবাধিকারের রক্ষা।
২৪-এর বাংলাদেশ নতুন শপথে উদিত হোক অসাধুদের বিদায়, জনতার পুলিশই আমাদের ভবিষ্যৎ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে, ন্যায়বিচার আদায় না হওয়া পর্য!।’
এ বিষয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে ফোন করলে তিনি প্রথমে ওসির বরাত দেন, পরবর্তীতে তিনি টাকার বিষয়ে অস্বীকার করেন এবং মোস্তফা কামালের আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ছবি রয়েছে বলে জানান। মোস্তফা কামাল আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ২৮ মে চাঁদপুরের ও কচুয়ার গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ আমাকে অবহিত করেছেন এবং মোস্তফা কামালের ভাই ছাত্রঅধিকার পরিষদের নেত আমার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মতলব সার্কেলকে দিয়েছি। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আপনার মতামত লিখুন