স্বাধীনতার পর থেকে নেই কোন বিদ্যালয়
কচুয়ায় নাজমুন নাহার বেবী সপ্রাবি করতে চায় এলাকাবাসী


চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের ঘোগড়ার বিলের গ্রামের নাম জলা-বিতারা। অতি দুর্গম এ গ্রামে নেই পাকা রাস্তাঘাট ও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাতায়াতের জন্য হেটেঁ চলাই এ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ঘোগড়াবিলের মাঝখানে অবস্থিত এ গ্রামটিতে শিশু শিক্ষার জন্য নেই কোনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে দূরের স্কুলে গিয়ে কেউ কেউ পড়তে গেলেও ক’দিন বাদে ঝরে পড়ছে তারা।
দুর্গম এ গ্রামে স্কুল না থাকায় ৩/৪ মাইল পথ হেঁটে কোমলমতি শিশুদের যেতে হয় পাশের গ্রামের স্কুলে। দীর্ঘ এ পথ পেরোনো তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। কাদামাটির রাস্তা আর সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তাদের। ফলে ভয়ে অনেক শিশুই এখন বিদ্যালয় বিমুখ।
অভিভাবকরাও থাকেন বেশ শঙ্কায়। এর ফলে বাড়ছে শিশুদের ঝরে পড়ার হার। জলা-বিতারা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে নাজমুন নাহার বেবী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি সরকারি বিদ্যালয় করতে চায় এলাকাবাসী। এর জন্য ওই গ্রামের জাকির হোসেন ও মনির হোসেন ৩৩ শতাংশ জমিও দান করেছেন।
যদিও স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন কারনে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।
উপজেলার ২৪৩টি গ্রামের মধ্যে ১৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত জলা-বিতারা গ্রামে স্বাধীনতার আগে পরে কোন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়নি।
জলা-বিতারা গ্রামের অধিবাসী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোক্তা মো. কবির হোসেন জানান, আমাদের এ গ্রামে ১৫টি ছোট-বড় বাড়ি নিয়ে প্রায় ২হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৫শ জন ভোটার বসবাস করছে। প্রতি ঘরেই দুই থেকে তিনটি করে শিশু আছে। এ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ মাইল দূরে সাচার, ৩ মাইল পশ্চিমে বিতারা ও ২ কিলোমিটার দক্ষিণে বাইছারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। দূরত্বের কারণেই গ্রামের শিশুরা ঝরে পড়ে স্কুল থেকে।
তিনি আরো জানান, শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি স্কুল এখানে জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন এর সহধর্মীনি নাজমুন নাহার বেবীর নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১লা জানুয়ারী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন এর উপস্থিতিতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক ও ১৩০জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শ্রেনিতে ভর্তি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মো. মামুনুর রশিদ মোল্লা জানান, আমাদের ৩৩ শতাংশ নিজস্ব জায়গা হয়েছে। এখন একটি স্কুল হলেই শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি। গ্রামটিতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনি জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এজন্য তিনি নতুন ভবন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ বিদ্যালয়টি স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবু ইউসুফ জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে ঘোগড়ার বিল মধ্যবর্তী অবহেলিত এ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। বিদ্যালয়টি জানুয়ারী থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তাই দ্রুত অনুমোদন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য জোড় দাবী জানাই।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পারভীন সুলতানা বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও বিতারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে জলা-বিতারা গ্রামে জনস্বার্থে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন