নদী ভাঙনে হচ্ছে না ছেলেমেয়েদের বিয়ে, দাবি পরিবারের


চাঁদপুরের উত্তর নানুপুর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গনে ফসলি জমি, বসতভিটা ও কবরস্থান ডাকাতিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন রক্ষায় বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার ৮নং বাগাদী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড উত্তর নানুপুর গ্রামে নদীর তীরবর্তী ভাঙ্গন স্থানে মানববন্ধন করে এলাকার প্রায় শতাধিক এলাকাবাসী। এসময় তারা ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন থেকে পৈত্রিকভিটা রক্ষায় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করে।
সরজমিনে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে অত্র এলাকা ও আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম। গত এক দশকে শুধু নানুপুর এলাকার ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার অসংখ্য বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন সম্পর্কে নদীর পাশে বসবাসকারী মো. শাহজাহান পাটোয়ারী ও শাহাদাত তালুকদার বলেন, নদীর পাশে এই ফসলি জমিগুলো অনেক বড় ছিল। বর্তমানে প্রত্যেকটা ফসলি জমি এমন অবস্থায় আছে যে আগামী বছর আর একটাও ফসলি জমি থাকবে না। আমরা গরীব মানুষ যদি এই ফসলি জমিগুলো ভেঙ্গে যায় তাহলে কিভাবে চলবো ও কিভাবে খাব। আমাদের দাবি যদি একটু ব্লক দিয়ে নদীর পাড় গুলো বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে জমিটা বাঁচলো, আমরাও কাজ করে খেতে পারব।
ভাঙন এলাকায় বসবাসকারী মাজেদা বেগম, হনুফা বেগম ও রওশন আরা বেগম জানান, গত ২০-২৫ বছর ধরে আমাদের ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি ডাকাতিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কত মানুষরে জানাইছি দেখার মত কোন মানুষ আসে না। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা কোথায় যাব কি করব বুঝতে পারছি না। আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে করাতে পারিনা। গাং ভাংতি বলে কেউ মেয়েদের নেয় না এবং ছেলেদের কেউ বউ দেয় না। নদী এখন ঘরে মধ্যেই বললেই চলে। বর্তমান সরকার যদি নদীভাঙ্গা থেকে আমাদের রক্ষা করে তাইলে আমরা বাঁচতে পারব।
ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন রক্ষায় দীর্ঘ সময় নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে মানববন্ধনে এলাকাবাসী নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবী তোলেন। এ সময় মানববন্ধনে উত্তর নানুপুর গ্রামের খোরশেদ বেপারী, আবু সাঈদ গাজী, আবুল কালাম গাজী, আতিক তালুকদার, মো. শাহজাহান পাটোয়ারী, শাহাদাত তালুকদার, হেলাল তালুকদার, নেছার তালুকদার, মাজেদা বেগম, হনুফা বেগম, রওশন আর বেগম, আবুল বেপারী, মিন্টু গাজী, নেছার বেপারীসহ এলাকার প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ডাকাতিয়া নদীর চলমান ভাঙ্গন বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, ডাকাতিয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙ্গন প্রবণতা রয়েছে। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্যে ডিটেল ফিজিবিলিটি স্টাডি করে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি পাস হলেই ভাঙন রক্ষায় কাজ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন