নতুন সিরীয় নেতার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ
 
                                                                    
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা রোববার সৌদি যুবরাজ ও কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর। রিয়াদ থেকে এএফপি জানায়, রিয়াদে পৌঁছানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানির সঙ্গে সফররত শারাকে সৌদি কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আল-ইখবারিয়ার সম্প্রচারিত ছবিতে এই দৃশ্য দেখা যায়।
পরে সৌদি সরকারি সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানায়, যুবরাজ মোহাম্মদ শারাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, তবে তাদের আলোচনার বিস্তারিত বিষয়বস্তু তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার ইসলামপন্থী গোষ্ঠী কর্তৃক বাশার আল-আসাদ উৎখাতের পর আহমেদ আল-শারাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সৌদি বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ তার আনুষ্ঠানিক নিয়োগের পরপরই অভিনন্দন জানান।
সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।
গত ডিসেম্বরে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শারা বলেন, সৌদি আরব অবশ্যই সিরিয়ার ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দেশটিতে বিনিয়োগের ‘বিশাল সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিনি সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তার বাবা কর্মরত ছিলেন, এবং জীবনের প্রথম সাত বছর তিনি উপসাগরীয় এ তেলসমৃদ্ধ দেশেই কাটিয়েছেন।
‘কৌশলগত সুবিধা’
মিশরের আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর আঞ্চলিক বিশ্লেষক রাবহা সাইফ আল্লাম বলেন, ‘সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে রিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
তিনি আরও বলেন, আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব সিরিয়ার স্থিতিশীলতা থেকে সরাসরি উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, ‘সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব এখন প্রায় শূন্যের কোটায়, যা দেশটির আঞ্চলিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। পাশাপাশি সিরিয়া থেকে উপসাগরীয় দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে বিদ্যমান থাকা মাদক চোরাচালানও এখন অতীত।’
দামেস্ককে তেহরানের প্রভাব থেকে সরিয়ে নেওয়াটা রিয়াদের জন্য একটি ‘কৌশলগত সুবিধা’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যদিও ২০২৩ সালে সাত বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদের অবসান ঘটিয়ে সৌদি আরব ও ইরান পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তারা এখনো বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক বিষয়ে মতবিরোধে রয়েছে, যার মধ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অন্যতম। এ সংঘাতে তারা বিপরীত পক্ষকে সমর্থন দিয়েছিল।
সিরিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্যও চাপ দিচ্ছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ফেলেছে।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াকে ‘সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে ২০১১ সালে আসাদবিরোধী গণবিক্ষোভ দমন এবং পরবর্তী সময়ে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো এ নিষেধাজ্ঞা কঠোর করে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মাসে দামেস্ক সফর করে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
সফরকালে প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সব দেশের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনায় রয়েছি, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এবং আমরা ইতিবাচক বার্তা পাচ্ছি।’
আসাদ উৎখাতের পর থেকে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমাগত কূটনৈতিক যোগাযোগ চলছে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি গত বৃহস্পতিবার দামেস্ক সফরে যান। তিনি সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত এবং পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সমাজের সব শ্রেণির প্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার গঠনের ওপর জোর দেন।
 
                
 
                 
                                 
                                 
                                     
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                     
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মতামত লিখুন