খুঁজুন
রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৫, ১৬ চৈত্র, ১৪৩১

দূষণ রোধে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২:১৫ অপরাহ্ণ
দূষণ রোধে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবেশ দূষণ আলোচনায় ইদানীং মার্কসকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হলো, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা, যা মুনাফার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ও অবৈধ শোষণ করে। মার্কস তার রচনায় (বিশেষত Capital এবং Grundrisse) উল্লেখ করেছিলেন যে, পুঁজিবাদ মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটি বিপর্যয়কর ফাটল (Metabolic Rift) সৃষ্টি করে, যা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণে পরিবেশ দূষণের কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা অন্যতম, যেখানে পুঁজিপতিরা মুনাফা বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে। অতিরিক্ত শিল্পায়নও এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যেখানে কারখানা, রাসায়নিক শিল্প এবং কৃষির অতিরিক্ত যান্ত্রিকীকরণ বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ বাড়িয়ে তোলে।

নব্য উদারনৈতিক (Neoliberal) নীতিও পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, কারণ এটি বেসরকারিকরণ ও বাজারমুখী অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষা করে। তাছাড়া, শ্রমিক শ্রেণির শোষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যতম সমস্যা, যেখানে শিল্প ও খনি এলাকায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য উপেক্ষিত হয়, যা দূষণের কারণে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি, নব্য উদারনৈতিক নীতি পরিবেশ সংরক্ষণের চেয়ে বাজারমুখী অর্থনীতির প্রসার ও মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরিবর্তে বেসরকারিকরণ এবং কর্পোরেট লোভকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে পরিবেশগত সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

একদিকে শিল্পের বিকাশ ঘটে, অন্যদিকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপেক্ষিত হয়। বিশেষত, শিল্প ও খনি এলাকায় শ্রমিকরা চরম পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। ফলে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনিয়ন্ত্রিত বিকাশ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য নয়, বরং সামগ্রিক মানবসমাজের জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।

দূষণ এখন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে, যা প্রতি বছর লক্ষাধিক অকাল মৃত্যু এবং মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মার্কসের কথার সত্যতা বর্তমান পৃথিবীতে দৃশ্যমান দূষণের চিত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দূষণ এখন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে, যা প্রতি বছর লক্ষাধিক অকাল মৃত্যু এবং মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বায়ু দূষণ একাই প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যেখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ২,৭২,০০০-এর বেশি মানুষ অকালে মারা যায়, যা দেশের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশ ক্ষতি করে। যুক্তরাজ্যে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ১,১০০ জন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পানি দূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন অকাল মৃত্যু ঘটে এবং বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত ধাতু ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। মাটির দূষণও বিপজ্জনক, যেখানে ভারী ধাতু, কীটনাশক এবং শিল্প বর্জ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে, মাটির জৈব উপাদান ২ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে নীতিগত সংস্কার ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বে সবচেয়ে উচ্চারিত প্রপঞ্চই হলো টেকসই উন্নয়ন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৫ সালে এটি ঘোষণার বহু আগেই মার্কস এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। মার্কসবাদী দর্শনে, পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ পুঁজিবাদ সর্বদা মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা প্রকৃতির শোষণ ও দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্পোরেট স্বার্থ ও বাজারপ্রধান অর্থনীতির প্রভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ উপেক্ষিত হয়, ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার অব্যাহত থাকে।

এর বিপরীতে, প্রকৃত পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনীতির প্রয়োজন, যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা জনস্বার্থ ও পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। তাই দূষণের টেকসই ও সামগ্রিক সমাধান খুঁজতে আমাদের মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মার্কসবাদীরা বিশ্বাস করে, প্রকৃত পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে পরিকল্পিত অর্থনীতি ও সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এই মডেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যার মধ্যে টেকসই কৃষি ও শিল্পনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই করবে না বরং শ্রমিকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে। আসলে, টেকসই উন্নয়ন মডেলের মূল ভিত্তিই হলো এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা।

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গঠনে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে, যার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার অন্যতম। বর্তমানে বিশ্বে সৌর ও বায়ু শক্তির অবদান ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে (IEA, 2023)। টেকসই উৎপাদনের জন্য শূন্য-কার্বন কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে, যেমন টয়োটা ও বিএমডব্লিউ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-নিউট্রাল উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কৃষিক্ষেত্রে, জৈব কৃষি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৭৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে পরিচালিত হচ্ছে (FAO, 2023), যা রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহারে ৪০-৫০ শতাংশে পানি সাশ্রয় সম্ভব, যা কৃষিতে টেকসই ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্মাণ ক্ষেত্রে, LEED সার্টিফাইড সবুজ ভবন সাধারণ ভবনের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ কম জ্বালানি ব্যবহার করে এবং ২০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। প্যাকেজিংয়ে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ ব্যবহারের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, যেখানে কাগজের প্যাকেজিং ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হবে (McKinsey, 2023)। পরিবহন খাতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ২০২৩ সালে ১৪ মিলিয়ন ইউনিট ছাড়িয়ে গেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোট গাড়ির ৪০ শতাংশ হতে পারে (IEA, 2023)। এসব উদ্যোগ পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়নকে টেকসই রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এরপর সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে শুধু ধনীরা নয়, সব মানুষ পরিবেশগত সুবিধা ভোগ করতে পারে। সম্পদের ন্যায্য বণ্টন পরিবেশের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বর্তমানে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের দখলে রয়েছে বিশ্বের মোট সম্পদের প্রায় ৭০ শতাংশ। এই বিপুল বৈষম্য পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। ধনী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ভোগ করে, যা বর্জ্য উৎপাদন বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি দরিদ্র দেশগুলোয় সম্পদের বৈষম্য ১০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, তা দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি। অন্যদিকে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রায়শই তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়, যেমন বনভূমি ধ্বংস করা বা মাটি ক্ষয় করা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ বনভূমির ওপর নির্ভরশীল, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র।

সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো হ্রাস করা সম্ভব। যখন সবার কাছে সমান সুযোগ থাকে, তখন মানুষ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পরিবেশের ওপর কম নির্ভরশীল হয়। এটি টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে, বর্জ্য হ্রাস করে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি দরিদ্র দেশগুলোয় সম্পদের বৈষম্য ১০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

এছাড়া, ন্যায্য বণ্টন সামাজিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে, যা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্থিতিশীল সমাজে, মানুষ পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি যত্নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে, যা একটি স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। কার্ল মার্কসের মূল পরিকল্পনা ছিল, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন উৎপাদন ব্যবস্থা, যেখানে রাষ্ট্রই সব উৎপাদন ও সম্পদের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখবে। এই ব্যবস্থায় মুক্তবাজার অর্থনীতির মতো অসংখ্য বেসরকারি শিল্প ও কারখানার স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকবে না, কারণ উৎপাদন ব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে, অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মুনাফার স্বার্থে উৎপাদন চালিয়ে যায়, যা প্রায়ই পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনীতিতে, উৎপাদনের সব ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে, তাই পরিবেশের ওপর এর প্রভাবও সরাসরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। ফলে, যদি পরিবেশ দূষণ ঘটে, তাহলে রাষ্ট্রই একমাত্র দায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরদিকে, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে অসংখ্য পৃথক মালিকানাধীন কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, কিন্তু তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা অনেক কঠিন, কারণ তারা বিভিন্ন নিয়মকানুন এড়িয়ে যেতে পারে বা এককভাবে প্রভাব তেমন বোঝা যায় না। প্রশ্ন হলো, একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, নাকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ? রাষ্ট্রীয় মালিকানার অধীনে উৎপাদন ব্যবস্থা থাকলে একটি কেন্দ্রীয় নীতি প্রয়োগ করে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কঠিন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিগুলো কার্যকর করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ, পরিবেশ দূষণ কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়; এটি পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি। প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন, যা একটি সমাজতান্ত্রিক ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব।

ড. এ কে এম মাহমুদুল হক ।। অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মাত্র ৫ টাকায় ঈদের নতুন পোশাক : হাসি ফুটলো ৫০০ শিশুর

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪৬ অপরাহ্ণ
মাত্র ৫ টাকায় ঈদের নতুন পোশাক : হাসি ফুটলো ৫০০ শিশুর

মাত্র ৫ টাকা! এই টাকায় হয়তো আমরা এক কাপ চা কিনি কিন্তু চাঁদপুরের ফরাক্কাবাদের ৫০০ শিশুর কাছে এই ৫ টাকা ছিল ঈদের নতুন জামার স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি। ঈদের আনন্দ যেখানে অনেকের জন্য নতুন পোশাকের হাসি, সেখানে ফরাক্কাবাদের শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সেই হাসি ছিল অনিশ্চিত। তাদের সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছে স্বপ্নতরু সামাজিক সংগঠন।

“মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ” এই স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে, দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে স্বপ্নতরু। তারই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্বপ্নতরু সামাজিক সংগঠনের ফরাক্কাবাদ শাখা আয়োজন করে এক ব্যতিক্রমী ঈদ বাজারের।

শনিবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরাক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ যেন রঙিন হয়ে ওঠে সেই শিশুদের হাসিতে। অনুষ্ঠানে প্রায় ৫ শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে ৫ টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হয় নতুন ঈদের পোশাক।

তবে এটি কোনো দান নয়, ছিল এক সম্মানের আয়োজন। শিশুদের হাতে জামা তুলে দেওয়া হয় ‘ক্রয় করার’ অনুভূতি দিয়ে, যাতে তারা বুঝতে পারে এই জামা তারা নিজেরাই কিনেছে, দয়ার হাত পেতে নয়।
স্বপ্নতরু সামাজিক সংগঠনের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমরা চাই, কেউ যেন ঈদের দিনে নতুন জামা না পেয়ে কষ্টে না থাকে। সেই ভাবনা থেকেই ৫ টাকার বিনিময়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়েছে। যাতে তারা বোঝে, এ আনন্দ তাদের নিজের অধিকার।”

ঈদের নতুন জামা হাতে পেয়ে অনেক শিশুর চোখে ছিল খুশির জল। কারও হাতে রঙিন জামা, কারও হাতে নতুন ফ্রক, কেউবা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে বলছিল এবার আমিও নতুন জামা পরব!”
ফরাক্কাবাদের স্কুল মাঠের সেই দৃশ্যটা যেন ছিল মানবতার সবচেয়ে সুন্দর ছবির মতো।

মাত্র ৫ টাকায় কেনা জামার বিনিময়ে শত শত শিশুর মুখে ফুটে উঠলো ঈদের হাসি। স্বপ্ন দেখুক তারা, এগিয়ে যাক মানবতা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং স্বপ্নতরু সংগঠনের সকল শাখার সদস্যরা।

চাঁদপুর এসএসসি ৯৩ ব্যাচ বন্ধু মহলের ইফতার মাহফিলে যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসান

আলোকিত চাঁদপুর রিপোর্ট
প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ৮:১৪ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর এসএসসি ৯৩ ব্যাচ বন্ধু মহলের ইফতার মাহফিলে যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসান

চাঁদপুর এসএসসি ৯৩ ব্যাচ বন্ধু মহলের ইফতার মাহফিলে বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বন্ধু মোহাম্মদ নাজমুল আহসানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ৯৩ ব্যাচের সকল বন্ধুরা।

চাঁদপুর এসএসসি ৯৩ ব্যাচ বন্ধু মহলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের রেডচিলি চাইনিজ এন্ড রেষ্টুরেন্টে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ইফতার মাহফিলে অংশ নেন এসএসসি ৯৩ ব্যাচের বন্ধু ও বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।

ইফতার মাহফিলের পূর্বে ৯৩ ব্যাচের সকল বন্ধুরা মিলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
পরে বন্ধু মহলের আব্দুল গফুরের দোয়া ও মুনাজাত পরিচালার মাধ্যমে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় চাঁদপুরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের এসএসসি ৯৩ ব্যাচের সকল বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের পাশে দাঁড়ালেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক

শওকত আলী
প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের পাশে দাঁড়ালেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক

পবিত্র ঈদুল ফিতর সুন্দরভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

শনিবার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলায় আহত ও শহিদ পরিবারের কাছে ঈদ উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪৫ জন আহত এবং ৩১ জন শহীদ পরিবারকে ঈদ উপহার প্রদান করা হয়। এছাড়াও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২৯ জন শহীদ পরিবারকেও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঈদ সামগ্রী দেয়া হয়।

ঈদ সামগ্রীর মধ্যে ২ কেজি পোলাওয়ের চাল, সয়াবিন তেল ২ লিটার, সেমাই ৪ প্যাকেট, চিনি ১ কেজি, কিসমিস ও গুড়া দুধ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, আমি চেয়েছি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা যেন পবিত্র ঈদুল ফিতর সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারে তার জন্যে একটু ক্ষুদ্র উপহার সামগ্রী দেয়া হয়েছে।

ডিসি আরো বলেন, শুধুমাত্র ঈদ নয়, সবসময়ই চাঁদপুর জেলা প্রশাসন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত এবং শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে। আমি আশাকরি রাষ্ট্রও সবসময়ই তাদের পাশে আছে এবং থাকবে। কারণ রাষ্ট্র সবসময়ই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত এবং শহীদদের কথা ভাবেন এবং চিন্তা করেন।