খুঁজুন
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১০ কার্তিক, ১৪৩২

দূষণ রোধে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২:১৫ অপরাহ্ণ
দূষণ রোধে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবেশ দূষণ আলোচনায় ইদানীং মার্কসকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হলো, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা, যা মুনাফার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ও অবৈধ শোষণ করে। মার্কস তার রচনায় (বিশেষত Capital এবং Grundrisse) উল্লেখ করেছিলেন যে, পুঁজিবাদ মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটি বিপর্যয়কর ফাটল (Metabolic Rift) সৃষ্টি করে, যা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণে পরিবেশ দূষণের কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা অন্যতম, যেখানে পুঁজিপতিরা মুনাফা বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে। অতিরিক্ত শিল্পায়নও এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যেখানে কারখানা, রাসায়নিক শিল্প এবং কৃষির অতিরিক্ত যান্ত্রিকীকরণ বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ বাড়িয়ে তোলে।

নব্য উদারনৈতিক (Neoliberal) নীতিও পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, কারণ এটি বেসরকারিকরণ ও বাজারমুখী অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষা করে। তাছাড়া, শ্রমিক শ্রেণির শোষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যতম সমস্যা, যেখানে শিল্প ও খনি এলাকায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য উপেক্ষিত হয়, যা দূষণের কারণে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি, নব্য উদারনৈতিক নীতি পরিবেশ সংরক্ষণের চেয়ে বাজারমুখী অর্থনীতির প্রসার ও মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরিবর্তে বেসরকারিকরণ এবং কর্পোরেট লোভকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে পরিবেশগত সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

একদিকে শিল্পের বিকাশ ঘটে, অন্যদিকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপেক্ষিত হয়। বিশেষত, শিল্প ও খনি এলাকায় শ্রমিকরা চরম পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। ফলে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনিয়ন্ত্রিত বিকাশ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য নয়, বরং সামগ্রিক মানবসমাজের জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।

দূষণ এখন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে, যা প্রতি বছর লক্ষাধিক অকাল মৃত্যু এবং মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মার্কসের কথার সত্যতা বর্তমান পৃথিবীতে দৃশ্যমান দূষণের চিত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দূষণ এখন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে, যা প্রতি বছর লক্ষাধিক অকাল মৃত্যু এবং মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বায়ু দূষণ একাই প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যেখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ২,৭২,০০০-এর বেশি মানুষ অকালে মারা যায়, যা দেশের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশ ক্ষতি করে। যুক্তরাজ্যে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ১,১০০ জন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পানি দূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন অকাল মৃত্যু ঘটে এবং বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত ধাতু ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। মাটির দূষণও বিপজ্জনক, যেখানে ভারী ধাতু, কীটনাশক এবং শিল্প বর্জ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে, মাটির জৈব উপাদান ২ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে নীতিগত সংস্কার ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বে সবচেয়ে উচ্চারিত প্রপঞ্চই হলো টেকসই উন্নয়ন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৫ সালে এটি ঘোষণার বহু আগেই মার্কস এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। মার্কসবাদী দর্শনে, পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ পুঁজিবাদ সর্বদা মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা প্রকৃতির শোষণ ও দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্পোরেট স্বার্থ ও বাজারপ্রধান অর্থনীতির প্রভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ উপেক্ষিত হয়, ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার অব্যাহত থাকে।

এর বিপরীতে, প্রকৃত পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনীতির প্রয়োজন, যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা জনস্বার্থ ও পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। তাই দূষণের টেকসই ও সামগ্রিক সমাধান খুঁজতে আমাদের মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মার্কসবাদীরা বিশ্বাস করে, প্রকৃত পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে পরিকল্পিত অর্থনীতি ও সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এই মডেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যার মধ্যে টেকসই কৃষি ও শিল্পনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই করবে না বরং শ্রমিকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে। আসলে, টেকসই উন্নয়ন মডেলের মূল ভিত্তিই হলো এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা।

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গঠনে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে, যার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার অন্যতম। বর্তমানে বিশ্বে সৌর ও বায়ু শক্তির অবদান ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে (IEA, 2023)। টেকসই উৎপাদনের জন্য শূন্য-কার্বন কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে, যেমন টয়োটা ও বিএমডব্লিউ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-নিউট্রাল উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কৃষিক্ষেত্রে, জৈব কৃষি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৭৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে পরিচালিত হচ্ছে (FAO, 2023), যা রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহারে ৪০-৫০ শতাংশে পানি সাশ্রয় সম্ভব, যা কৃষিতে টেকসই ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্মাণ ক্ষেত্রে, LEED সার্টিফাইড সবুজ ভবন সাধারণ ভবনের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ কম জ্বালানি ব্যবহার করে এবং ২০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। প্যাকেজিংয়ে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ ব্যবহারের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, যেখানে কাগজের প্যাকেজিং ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হবে (McKinsey, 2023)। পরিবহন খাতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ২০২৩ সালে ১৪ মিলিয়ন ইউনিট ছাড়িয়ে গেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোট গাড়ির ৪০ শতাংশ হতে পারে (IEA, 2023)। এসব উদ্যোগ পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়নকে টেকসই রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এরপর সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে শুধু ধনীরা নয়, সব মানুষ পরিবেশগত সুবিধা ভোগ করতে পারে। সম্পদের ন্যায্য বণ্টন পরিবেশের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বর্তমানে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের দখলে রয়েছে বিশ্বের মোট সম্পদের প্রায় ৭০ শতাংশ। এই বিপুল বৈষম্য পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। ধনী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ভোগ করে, যা বর্জ্য উৎপাদন বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি দরিদ্র দেশগুলোয় সম্পদের বৈষম্য ১০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, তা দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি। অন্যদিকে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রায়শই তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়, যেমন বনভূমি ধ্বংস করা বা মাটি ক্ষয় করা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ বনভূমির ওপর নির্ভরশীল, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র।

সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো হ্রাস করা সম্ভব। যখন সবার কাছে সমান সুযোগ থাকে, তখন মানুষ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পরিবেশের ওপর কম নির্ভরশীল হয়। এটি টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে, বর্জ্য হ্রাস করে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি দরিদ্র দেশগুলোয় সম্পদের বৈষম্য ১০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

এছাড়া, ন্যায্য বণ্টন সামাজিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে, যা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্থিতিশীল সমাজে, মানুষ পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি যত্নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে, যা একটি স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। কার্ল মার্কসের মূল পরিকল্পনা ছিল, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন উৎপাদন ব্যবস্থা, যেখানে রাষ্ট্রই সব উৎপাদন ও সম্পদের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখবে। এই ব্যবস্থায় মুক্তবাজার অর্থনীতির মতো অসংখ্য বেসরকারি শিল্প ও কারখানার স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকবে না, কারণ উৎপাদন ব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে, অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মুনাফার স্বার্থে উৎপাদন চালিয়ে যায়, যা প্রায়ই পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনীতিতে, উৎপাদনের সব ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে, তাই পরিবেশের ওপর এর প্রভাবও সরাসরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। ফলে, যদি পরিবেশ দূষণ ঘটে, তাহলে রাষ্ট্রই একমাত্র দায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরদিকে, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে অসংখ্য পৃথক মালিকানাধীন কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, কিন্তু তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা অনেক কঠিন, কারণ তারা বিভিন্ন নিয়মকানুন এড়িয়ে যেতে পারে বা এককভাবে প্রভাব তেমন বোঝা যায় না। প্রশ্ন হলো, একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, নাকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ? রাষ্ট্রীয় মালিকানার অধীনে উৎপাদন ব্যবস্থা থাকলে একটি কেন্দ্রীয় নীতি প্রয়োগ করে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কঠিন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিগুলো কার্যকর করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ, পরিবেশ দূষণ কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়; এটি পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি। প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন, যা একটি সমাজতান্ত্রিক ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব।

ড. এ কে এম মাহমুদুল হক ।। অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৫০ অপরাহ্ণ
ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল ২২ দিনের ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা। এসময় নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে নদীতে নামবেন জেলেরা।

শেষ সময়ে কেউ মেরামত করছেন নৌকা, কেউবা পুরোনো জাল সেলাই করে নিচ্ছেন নতুন করে। চোখে মুখে আনন্দের অনুভূতি থাকলেও আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। তারা বলছেন, এবছর ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। আর এখন মৌসুম শেষ। জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলে কষ্টের পাল্লা ভারী হবে।

এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন চাঁদপুরে নিবন্ধিত ৪৫ হাজার ৬১৫ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু তা ছিল জেলেদের কাছে অপ্রতুল। ওই সময় জীবিকা হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েন জেলেরা।

এদিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ ধরতে না গেলেও নিষেধাজ্ঞার পর বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে এবং মহাজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে বলে আক্ষেপ করেছেন।

তাদের অভিযোগ, মূল জেলেদের কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে। অথচ যারা মাছ ধরতে জীবনেও নদীতে নামেনি এমন বিভিন্ন পেশার বেশ কিছু মানুষ সরকারী সহায়তার কার্ড পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকি বেশ কিছু জেলে সরকারি সহযোগিতা পেয়েও সরকারের নির্দেশনা না মেনে অবৈধভাবে নির্বিচারে মা ইলিশ শিকার করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে সরকারের পরবর্তী সহযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ারও আহ্বান জানান।

মৎস্য কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার গত বছরের চেয়ে মাছের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে পারে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকার করতে দেওয়া হয়নি। এবার রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ উৎপাদন হতে পারে।

তিনি আরও জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।

এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো ৪৪৫ টি অভিযানে ৭৭ টি মামলা ও ৭৪ টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১১৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ৬ কোটি মিটার অবৈধ জাল, ১১০০ টন ইলিশ জব্দ করে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রদান করাহয়।

জনশ্রুতি আছে অভিযানে সময় অনেক জেলে সরকারের বরাদ্দ করা চাল পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার মধ্যরাতে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই উপকূলের জেলেরা জাল, নৌকা, ট্রলার ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। বিশেষ করে হরিনা ঘাট, আখনের ঘাট, পুরানবাজার রনাগোয়াল, লঞ্চ ঘাট, হাইমচরের নীলকমল, মতলব উত্তর মোহনপুর নৌঅঞ্চলের জেলেরা এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

শ্যামল সরকার
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
ফরিদগঞ্জে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক ১

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত যৌথবাহিনি। এ ঘটনায় দুই মাদক কারবারি পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করা হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের ছোট বাড়ি এলাকা থেকে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর আর্মি ক্যাম্পের অপারেশনাল অফিসার লেফটেন্যান্ট জাবিদ হাসান ও ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রাজিব চক্রবর্তী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকদিরামপুর গ্রামের খলিল বেপারির ছেলে মাদক কারবারি আল-আমিন (২৫) ও তার সহযোগী হত্যা মামলার আসামি রুবেল হোসেন (২৮) ফজরের নামাজের পর একটি প্রাইভেটকারে করে বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে আসে। পরে আল-আমিনের বাড়ির গোসলখানায় গাঁজাগুলো লুকিয়ে রাখে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

পরে এলাকাবাসী পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দিলে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।

এলাকাবাসী জানায়, রুবেল হোসেন এর আগে একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। গত ১০ দিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আবারও মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একই ইউনিয়নের বাইক্কারবাগানের পাশের ডোবা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী সোহেল হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে মামলার অন্যতম আসামি ছিল রুবেল হোসেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন স্বপন মিয়াজী জানান, সকালে ফজরের নামাজের পর এলাকাবাসী আমাকে জানায়, এ এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি রুবেল জেল থেকে বের হয়ে আবারও মাদক কারবারির সাথে জড়িয়ে পড়েছে এবং বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ এলাকায় প্রবেশ করলে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানা পুলিশকে খবর দেই। তিনি আরো জানান, তাদের কারনে এ এলাকার যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্ আলম বলেন, সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ডিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করি। তবে মূল মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। আল-আমিনের বাবা খলিল বেপারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ধানের শীষ প্রতীকের গণসংযোগ শুরু করলেন ইঞ্জি. মমিনুল হক

মো. ইউসুফ বেপারী
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:২১ অপরাহ্ণ
ধানের শীষ প্রতীকের গণসংযোগ শুরু করলেন ইঞ্জি. মমিনুল হক

হাজীগঞ্জে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে নিজ ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করলেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জি. মমিনুল হক।

শুক্রবার দিনব্যাপী তিনি উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেন। এরমধ্যে তিনি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা, উত্তর রায়চোঁ, বড়কুল রামকানাই উচ্চ বিদ্যালয়, রায়চোঁ বাজার, মধ্য বড়কুল, আড়ুলি, মোল্লাডহর, দিকচাইল, সেন্দ্রা ও কোন্দ্রা এলাকায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

পথসভায় ইঞ্জি. মমিনুল হক চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে ইউনিয়নবাসীর সম্মতি চাইলে উপস্থিত লোকজন একযোগে হাত উঁচিয়ে সম্মতি প্রকাশ এবং ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এসময় তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির ২২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় গণসংযোগ ও পথসভা কার্যক্রম শুরু করলাম। দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। তারা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করে তারেক রহমানকে আগামির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাছান মিয়াজীর সভাপতিত্বে গণসংযোগ ও পথসভায় সফর সঙ্গী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী, বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের মিয়া, ইঞ্জি. জাহাঙ্গীর আলম, ইমান হোসেন, অহিদুল ইসলাম মোহন, আব্দুল গফুর পাটওয়ারী, ওলি উল্যাহ, আলমগীর হোসেন, মোশারফ হোসেন, তাফাজ্জল হোসেন বতু, শাহাদাত হোসেন মিলন, জামাল মেম্বার, মিজানুর রহমান, মাসুদ রানা, উপজেলা মৎসজীবি দলের সভাপতি মো. ইমান হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম চৌধুরী মিঠু, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক এসএম ফয়সাল হোসাইন, পৌর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব দ্বীন ইসলাম টগর, ছাত্রনেতা শামছুদ্দিন খাঁন নূর, কবির হোসেন রাজু, ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল জব্বার, ইকবাল বেপারী, ইমাম হোসেন, আব্দুল মতিন, আলাউদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, হোসেন মজুমদার, স্বেচ্ছাসেবক নেতা মাসুম চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, সুমন রাজ, হাসানাত, সোহাগ, কৃষক নেতা মিজানুর রহমান, ছাত্রনেতা আলামিন দিনু, হাবিবুর রহমান, ওসমান গণি, সাব্বির হোসেন, শেখ ফরিদসহ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।