
কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা ও গুলি ছোড়ার প্রতিবাদ এবং ছয়দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি শেষে এ ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আমরা সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন করবো। সেই সঙ্গে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রেলপথ ব্লকেড করা হবে।
কখন থেকে এবং কোথায় এ কর্মসূচি করা হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা জানান, সময় ও স্থানসহ তাদের কর্মসূচির বিস্তারিত ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুক পেজে জানানো হবে।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, দিনভর আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক অবরোধ করেছি। আজকে মানুষের যে ভোগান্তি, সেটাই সামনে আসছে; সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি, অথচ আমাদের ভাইদের গুলি করা হয়েছে; রক্ত ঝরেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর যদি কোনো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা গুলি খেয়ে থাকে, সেটা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও প্রিন্সিপালের নির্দেশে হামলা করা হয়েছে। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা প্রিন্সিপালকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছি। অথচ সরকার সারা দিনেও একজন প্রিন্সিপালকে সরাতে পারেনি। একজন প্রিন্সিপালকে সরাতে সারাদিন লাগলে তারা দেশ চালাবেন কীভাবে?
জুবায়ের পাটোয়ারি বলেন, দেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনেক। আমরা সরকারকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন না। যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, তাহলে সামাল দিতে পারবেন না। দাবি আদায় করেই আমরা রাজপথ ছাড়বো।
বুধবার সকালে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেলে সাতরাস্তা মোড়ে যান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শোয়াইব আহমাদ খান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে পদোন্নতিতে ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের’ কোনো কোটা রাখা হবে না বলেও জানান।
ডিজি ও অধ্যক্ষের আশ্বাসের পরও সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, প্রত্যেকটি দাবি পূরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
তবে আশ্বাস দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা রাস্তা না ছাড়ায় কারিগরি অধিদপ্তরের ডিজি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে চলে যান। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে কর্মকর্তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
বিকেলে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড.খ.ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ছয় দফা দাবির মধ্যে পদোন্নতিতে (জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে) ৩০ শতাংশ কোটা (ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের) রয়েছে বা আদালতের নির্দেশনা আছে বলে ওরা বলছে, এটা সত্য নয়। তারা ভুল তথ্যের ওপর আন্দোলন করছেন। আমরা বলেছি, ওখানে ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে না। তাহলে তো হয়ে গেলো।
‘আরেকটা দাবি আছে, যেখানে ওরা বলছে-কারিগরির বাইরের সবাইকে সরিয়ে দিতে হবে। ওটা তো হুট করে সম্ভব নয়। এটা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হবে। ওই পথ চলাটা আমরা শুরু করে দিয়ে যাবো।’
বাকি চারটি দাবি পূরণে কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব বলেন, ‘বাকি যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। ওরা তো নিজের ভালো-মন্দ খুব বেশি বোঝে না। ওদের জন্য আরও বড় বড় কাজ করছি আমরা। যে কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে দেশের কারিগরি শিক্ষা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।’
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি-
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা প্রকৌশল ডিগ্রি থাকতে হবে।
৩. ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরসহ দেশের কারিগরি সব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
৪. কারিগরি (পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদের জন্য) সব বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষা চালু ও শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরির আবেদনের সুযোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য প্রাইভেট সেক্টরে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল নির্ধারণ করে দিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন