
উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থান। ঠিক উত্তর কোণের দিকে পড়ে থাকা পুরোনো কয়েকটি কবর, যেগুলোর কোনো নামফলক নেই। অযত্নে গজিয়ে ওঠা ঝোঁপঝাড় আঁকড়ে ধরে রেখেছে কবরগুলোকে।
মঙ্গলবারই সেই ঝোঁপঝাড়ের কিছু অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে দেখে বোঝা গেলো। কেননা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য এই জায়গাটিই নির্ধারণ করেছে সরকার।
পুরোনো কবরের ওপরেই দেওয়া হবে নতুন কবর, এমনটাই সিদ্ধান্ত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত কাউকেই এখানে দাফন করতে সম্মত হয়নি তাদের পরিবার। নিজ সন্তান বা স্বজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন তারা।
তাই উত্তরা ১২ নম্বর কবরস্থানের এই পুরোনো কবরগুলোতে নতুন মাটি পড়েনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝোঁপঝাড়গুলো।
কবরস্থানের খাদেম মাঈনুদ্দিন জানান, আমরা শুনেছিলাম এখানে ২০ জনকে কবর দেওয়া হবে। গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে আমরা অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু কেউ এখানে লাশ দাফন করতে আসেনি। কোনো কবর খোঁড়া হয়নি। তবে আমাদের লোকজন প্রস্তুত ছিল। পরে শুনেছি নিজেদের সন্তান বা আত্মীয়ের লাশ তারা নিজেদের বাড়িতে নিয়ে কবর দিয়েছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহত ছাত্র আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শামীমের বড় বোন ফারজানা কনিকা বলেন, শরীয়তপুরে বাবার পাশেই কবর দিয়েছি আব্দুল্লাহকে। বাবা-ছেলে পাশাপাশি শুয়ে আছে।
কনিকা বলেন, আমরা তিন ভাইবোন। মাত্র সাত মাস আগে বাবাকে হারিয়েছি। এবার হারালাম ১৪ বছরের ভাইকে। ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করিনি। ওর মরদেহ নিয়ে শরীয়তপুর রওয়ানা হয়েছিলাম।
সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণার পাশাপাশি নিহতদের জন্য কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য মাইলস্টোন স্কুলের সন্নিকটস্থ উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হবে।