
পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে চাঁদপুরে উদযাপন হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বুধবার সকালে দিবসের প্রথমে সার্কিট হাউজ থেকে র্যালী বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। তারপর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
তিনি বলেন, এ বছর পরিবেশ দিবসে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। পরবর্তী বছর হয়ত নদী দূষণ নিয়ে জোর দেয়া হবে। কোন কিছুই বাদ যাবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিবেশ রক্ষায় নানা প্রস্তাব করতে পারি। প্রশাসনেরও কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধতা আছে। একা সব কাজ করা সম্ভব নয়। তবে আপনারা দেখেছেন এখন কাপড়ের বাজারে প্লাস্টিক ব্যবহার হয় না। ব্যবহার হয় সব্জি ও মুদি দোকানে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহারে একটি পক্ষ উৎপাদন করছে এবং ব্যবহার করছে। আরেকটি পক্ষ ব্যবহার করছে না। এই দুটি পক্ষই একই শহরে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে সব সময় প্রশাসনের পক্ষে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হবে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা যেখান থেকে শিশুরা শৃঙ্খলা শিখবে সেখান থেকে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কাজ শুরু করতে পারেন।
ডিসি বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন প্লাস্টিকের ব্যবহার কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জমিতে জৈব সার ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। একটি সুন্দর পরিবেশে শুধুমাত্র মানুষই বসবাস করবে তা নয়, বরং জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের পরিবেশকে ঠিক রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য সাধারণ মানুষের সমর্থন বেশি প্রয়োজন। তাহলে যে কোন উদ্যোগ নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জলাবদ্ধতার জন্যও আমাদের পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। তবে আমরা নদী থেকে বালু উত্তোলন কমিয়ে আনতে অনেকটা সক্ষম হয়েছি। এই বিষয়ে আমাদের জনমত গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবেশ রক্ষায় শিশু কিশোরদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব। বেশ কিছু বছর আগেও শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব নিয়ম মেনে চলার প্রচলণ দেখা গেছে। শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষাই নয়, শিক্ষকদের অল্প সময় হলেও বাকি বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
চাঁদপুর পৌরসভা প্রসঙ্গে বলেন, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা জমি অধিগগ্রহণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। যখনই জমি অধিগ্রহণের জন্য জায়গান নির্ধারণ করা হয়, তখনই তারা জানতে চান এখানে কি হবে? বর্জ্য ব্যবস্থপনার কথা জানলে আর রাজি হন না।
মোহসীন উদ্দিন বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে হলে আমাদের সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আসুন, কিভাবে চাঁদপুরের পরিবেশকে ঠিক রাখতে পারি সেসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে প্রশাসনের চাইতে অনেক বেশি কাজ করতে পারবে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুল হান্নান রণি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকাওয়াত জামিল সৈকত।
স্বাগত বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। দিবসের মূল প্রতিপাদ্য, “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনি সময়’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষক ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী মো. আল-আমিন।
চাঁদপুর জেলার পরিবেশ ও বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিষ্টক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, চাঁদপুর আদালতের এপিপি অ্যাড. কাদের খান, সনাক চাঁদপুরের সভাপতি আলমগীর হোসেন পাটওয়ারী ও জেলা নদীর রক্ষা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুসাদ্দেক আল-আকিব।
বক্তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, বিকল্প ব্যবহার ও বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন এবং এসব বিষয় সমাধানে সরকারি উদ্যোগ ও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরীর বিষয়ে আলোচনা করেন।
সবশেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলেদেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক।