আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের সময় সব ধরনের ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদনে এই নিষেধাজ্ঞার চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোনের নানা উপযোগিতা থাকলেও নির্বাচনি পরিবেশে এর ব্যবহার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ড্রোন নিষিদ্ধের প্রধান কারণগুলো হলো—
১. গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা: ড্রোনের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ বা ব্যক্তিগত স্থানে নজরদারি চালানো সম্ভব, যা ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের পরিপন্থী।
২. নিরাপত্তার ঝুঁকি: অননুমোদিত ড্রোনে বিপজ্জনক বস্তু বা বিস্ফোরক বহন করে হামলার আশঙ্কা থাকে।
৩. আইন ও বিধি লঙ্ঘন: ড্রোন উড্ডয়নে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা মানেন না, যা নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে।
৪. তথ্যচুরি ও অপব্যবহার: ড্রোনে ভোটারদের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ড্রোন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এছাড়া ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের “ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার”-এর অধীনে মোতায়েন করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে নির্বাচন কমিশন। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি সামগ্রী পরিবহন ও কর্মকর্তা স্থানান্তরের কাজে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় যোগাযোগে সেনাবাহিনী বা বিজিবির ওয়্যারলেস ব্যবস্থার সহায়তা নেওয়া হবে।
তফসিল ঘোষণার আগে ও নির্বাচনের সময় বহিরাগত প্রভাবশালী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দমনেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের সব দপ্তরে নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ইসি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ১২টি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১.ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা,
২.সংখ্যালঘু ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা,
৩.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়,
৪.অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ,
৫.বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা,
৬.সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য রোধে কৌশল নির্ধারণ,
৭.পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা,
৮.সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা,
৯.পার্বত্য এলাকায় হেলিকপ্টার সহযোগিতা এবং
১০.ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা এবং আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.