২০ শতাংশ বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে টানা এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। কয়েকদিন অবস্থান কর্মসূচির পর এখন তারা বসেছেন অনশনে। বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচির পর টানা অনশন এবং তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষকরা।
শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে অনশন শুরু করেন তারা। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা অনশনে শিক্ষকরা। এরই মধ্যে তারা কালোপতাকা মিছিলও করেন।
শনিবার দুপুরের পর থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজীও এক দফায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের তথ্যমতে, শহীদ মিনারে চলমান অনশনে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন শিক্ষক এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা একজন সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ শিক্ষকদের মধ্যে দুজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- বরিশালের উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঝর্না গাইন, অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। তাদের মধ্যে ঝর্না গাইন এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। অন্যদিকে সংবাদ সংগ্রহে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া সাংবাদিক হলেন দৈনিক কালের কণ্ঠের মিলন মিয়া।
শিক্ষকরা ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পর আপাতত ১০ শতাংশ এবং আগামী বছর ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ শতাংশ অথবা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিতে সম্মত হয়েছে। এর চেয়ে বেশি এখন সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এখনো তিনি সবার সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই ৫ শতাংশের বেশি দিতে সম্মত নয়। সব দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাঁধে বর্তালেও প্রকৃত ঘটনা হলো—অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সরকারই শিক্ষকদের এ দাবি মেনে নিতে সক্ষম নয় বলে জানায়। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছুই করার নেই।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, শিক্ষকরা রাস্তায় পড়ে মরছেন, তাতেও আমলাদের মন গলছে না। আমরা মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা চেয়েছি। এটাই নাকি তাদের কাছে অনেক বেশি! এরপরও আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি।
‘বলেছি, আপাতত ১০ শতাংশ দেন, আর আগামী বাজেটে ১০ শতাংশ দেবেন; সেটা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করুন। তাতেও তাদের মন গলছে না। তাদের অন্তরে কে বা কারা সিলমোহর মেরে দিয়েছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ যোগ করেন অধ্যক্ষ আজিজী।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে সেই প্রজ্ঞাপন সামনে এলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।
তারা বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ হারে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পরে বিকেলে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এরপর থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
একই সঙ্গে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার এমপিভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা কর্মবিরতি চলছে। গত ১৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচি করছেন তারা। এতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.