প্রকৃতির আমোঘ নিয়মেই বাবা আমাদের ছেড়ে সাড়া দিয়েছেন আল্লাহর ডাকে। বাবা চলে যাবার আজ দুই বছর হলো। কিভাবে যে দুইটি বছর চলে গেল! এই দুই বছরে প্রতি দিনই বাবার অপরিসিম শূন্যতা অনূভব করেছি। বাবার ছায়া কি যে বিশাল সেটি বোধহয় কেবল যারা হারায় তারাই বুঝে।
আমার বাবা মোঃ আবুল কালাম পাঠান আমার দেখা সাধারণে অসাধারণ মানুষদের একজন। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা সৎ ও কর্মনিষ্ঠ এই মানুষটি আমার জীবনের আদর্শ।
১৮ই অক্টোবর বাবার ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে আব্বুর কথা মনে পড়লেই। এলোমেলো ভীড় করে অজস্র স্মৃতি। তিনি গত ১৮ই অক্টোবর ২০২৩ইং বুধবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আমরা বাবা বলতে রাশভারী গুরুগাম্ভীর্য যা বুঝি, আমাদের বাবা মোটেও সেরকম ছিলেন না। আমাদের ভাই বোনদের সেরা বন্ধু হয়ে কোমলতার পরশ ছড়িয়ে দিতেন। বাবা কে আমরা ভয় পেতাম না, তবে ভেতর থেকে শ্রদ্ধা করতাম। সব সমস্যা, মনের অনুভূতি যেন প্রকাশের সেরা জায়গা।
বাবা থাকতে ভাবতাম, বাবা যদি না থাকেন, তবে আমরা কিভাবে থাকবো ! বাবা নেই আজ দুইটি বছর, বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো এ কখনো কল্পনা করিনি, কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, মাস আর একেকটি বছর – বাবা নেই, আছে বাবার অনেকগুলো স্মৃতি, অনেকগুলো কথা, যা ভুলতে পারিনা, ভোলা যায়না।
তবুও সব ব্যথা, সব যন্ত্রণা ছাপিয়ে যদি বাবার মতো হতে পারতাম। যদি হতে পারতাম বাবার মতো উদার মনের মানুষ, মহৎ হৃদয়ের অধিকারী। যদি তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারতাম। আব্বু নেই! তার অনুপুস্থিতি আমাদের মাঝে বিরাট শুন্যতা তৈরি করেছে, যে শূন্যতা কিছুতেই পূরণ হবার নয়। মহান আল্লাহ তালা যেন বাবার অসম্পূর্ণ কাজ গুলি আমাদের দ্বারা পূর্ণতা দান করেন।
বাবা যখন হাসপাতালে থাকতেন, তখন তিনি অনেক কথা বলতেন, পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করতেন, মানুষকে খুব ভালোবাসতেন, ভালোবাসার সুকোমল অনুভূতির কথা বলতেন। বাবা কখনোই কারও বিরুদ্ধে কিছু বলা একদমই পছন্দ করতেন না। তিনি ছোট বড় সবাইকে সম্মান করতেন, সদা হাস্যজ্বল হৃদয়ে মানুষের বিপদের ক্ষণে আন্তরিকভাবে পাশে থাকতেন এবং কীভাবে মানুষকে আপন করে নিতে হয় সেটি শেখাতেন আমাদের।
আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমাদের বাবা। আমাদের বাবা সারাজীবন মানুষের উপকার করেছেন। তার জীবনের আদর্শ ছিলো মানুষের উপকার করা। খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করা তার পছন্দ ছিলো।
বাবার অবদান, ত্যাগ, স্নেহ, ভালোবাসা সকল তুলনার ঊর্ধে। পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক কখনো শ্রদ্ধার, কখনো ভয়ের আবার কখনো বা বন্ধুত্বের। পৃথিবীর সব সন্তানের কাছেই তার মা-বাবাই শ্রেষ্ঠ। আমাদের কাছেও তাই। পৃথিবীতে অন্য আট-দশ জন বাবা থেকে আমাদের বাবা একটু আলাদা। কারণ বাবার চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা সবকিছু ভিন্ন রকম। পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষকে দেখেছি নিজের স্বার্থের জন্য মানুষের উপকার করে। কিন্তু সবসময় আমাদের বাবাকে দেখতাম নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করতে। প্রয়োজনে নিজের ক্ষতি করে হলেও মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করত। তার সঞ্চয় ছিল শুধু মানুষের ভালোবাসা।
আজন্ম লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে থেকে গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। সেবার দ্বারা ও মহৎ কর্মের মাধ্যমে আলোর প্রদীপ হাতে নিয়ে মানুষটি অবদান রেখেছিলেন, সে মানুষটি আজ নিজের হাতে গড়ে তোলা পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
বাবার মৃত্যুর পর অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বাসায় তাঁরা এসেছেন। দেশের নানা প্রান্ত ও দেশের বাইরে থেকে ফোন করেছেন। বাবার প্রতি তাঁদের যে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অভিব্যক্তি দেখেছি, তা অতুলনীয় ও হৃদয়স্পর্শী। ভালোবাসার সম্ভবত একটি তরঙ্গ আছে। বাবা যেমন মানুষকে ভালোবাসতেন, তারাও তেমনি ভালোবাসতেন বাবাকে। ভালোবাসার সেই অদৃশ্য তরঙ্গ সবাইকে স্পর্শ করত।
বাবা সব সময় এত অকৃত্রিম, অনাড়ম্বর ও সহজভাবে থাকতেন যে তাঁর হৃদয়ের বিশালতা, গভীরতা ও প্রজ্ঞাসহ বহুকিছুই আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। মানুষকে ভালোবাসলে, তাদের জন্য কাজ করলে ও জীবন উৎসর্গ করলে মানুষ ভালবাসায় তার প্রতিদান দেয়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করি, “তিনি যেন আমাদের বাবাকে মাফ করে দেন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন”।
লেখকঃ
মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ
বি. এ (ফাযিল),এম.এ কামিল(হাদিস বিভাগ)ই.বি
বি.এস.এস (অনার্স) এম.এস.এস (জা.বি)
এল এল.বি (জা.বি) এল এল. এম (ডি.আই.ইউ)
এডভোকেট
জজকোর্ট, চাঁদপুর।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.