চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুলসী দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে।
স্থানীয় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের অভিযোগ অনুযায়ী, দীর্ঘ ৮–১০ বছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত থেকে তুলসী দেবনাথ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিউটির জন্য নিয়োগ দিতে জনপ্রতি ৫শ’ থেকে ১হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ, মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দাবি, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে ২শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ, দলনেতা-দলনেত্রীদের মাসিক ভাতা থেকে নিয়মিত টাকা কর্তন, এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারি ভাতা বণ্টনেও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা রেঞ্জ পরিচালক আশীষ কুমার ভট্টাচার্য ও ১৭ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ফাতেমাতুজ জোহরার নেতৃত্বে তদন্ত পরিচালিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তুলসী দেবনাথের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় উত্তর ইউনিয়নের দলনেতা মো. মোস্তফা কামালকে ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছরের কর্মজীবনে সততার সাথে দায়িত্বপালনকারী এ সদস্য ২০১৬ সালে “প্রেসিডেন্ট ভিডিপি সেবা পদক” অর্জন করেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পুনর্বহাল ও স্থগিত ভাতা চালুর দাবি জানিয়েছেন।
মোস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে আবেদন দাখিল করে বহিষ্কার আদেশ বাতিল ও পুনঃবহালের অনুরোধ করেছেন।
তিনি তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০০৪ সাল থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও, উপজেলা আনসার কর্মকর্তা তুলসী দেবনাথ ও প্রশিক্ষক পিন্টু চন্দ্র দাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই তাকে এবং আরও কয়েকজন দলনেতাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি জানান, তদন্তে মৌখিক ও লিখিতভাবে তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার পরও উল্টো তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। জেলা ও রেঞ্জ পর্যায়ের কয়েক দফা তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এতে শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে দুইবার “প্রেসিডেন্ট আনসার সেবা পদক” অর্জন করা কোম্পানি কমান্ডার আব্দুস ছাত্তার ও পৌর দলনেতা মোজাম্মেল হোসেনকেও একই অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, “আমি ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ভিডিপি সেবা পদক পাই। অথচ জুলাই/২০২৪ থেকে আমার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সরকারের নিকট আমার একটাই আবেদন, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে আমাকে পুনঃবহাল করা হোক।”
এদিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এক গণমাধ্যমকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের ফরিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত গ্রামভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে গিয়ে দেখেন ঘোষিত ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থীর স্থলে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪১ জন (৭ জন মেয়ে ও ৩৪ জন ছেলে)। এমনকি ওইদিন নতুন করে আরও ৪ জন ভর্তি হতে আসেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে প্রশিক্ষণের চতুর্থ দিনে গণমাধ্যমকর্মীরা গিয়ে দেখেন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে (২৪ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা)।
বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক তুলসী দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, “এখন পর্যন্ত মোট ৫৫ জন ভর্তি হয়েছে। অন্যরা আশপাশে আছে, হয়তো পরবর্তী দিনে যোগ দেবে। প্রশিক্ষণে মোট ৭০ জন অংশ নেবে এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের প্রত্যেককে সনদপত্র ও প্রতিদিন ১৫০ টাকা হারে মোট দেড় হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে, তবে ১০ টাকা কেটে রাখা হবে।
প্রশ্ন উঠেছে—যখন চতুর্থ দিনে উপস্থিত সদস্য সংখ্যা মাত্র ৩৪ জন, তখন অনুপস্থিত বাকিদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ছাড়াই কীভাবে ভাতা ও সনদ বিতরণ করা হবে? ভুক্তভোগী আনসার সদস্যরা মনে করেন, এটি আনসার কর্মকর্তার দুর্নীতির আরেকটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
স্থানীয় ভিডিপি সদস্যরা জানান, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা তুলসী দেবনাথ ও পিন্টু দাস এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু সদস্যদের ক্ষতিই করছে না, বরং পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যারা অনিয়মের প্রতিবাদ করেন, তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। ভুক্তভোগী সদস্যরা সরকারের কাছে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকৃত কর্মঠ সদস্যদের মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে তুলসী দেবনাথকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কিসের দুর্নীতি। আপনারা আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করুন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.