পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের উপজেলা চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ। ৬ লক্ষাধিক মানুষের বসবাসের এ উপজেলায় গড়ে দৈনিক ৪ থেকে ৫শত রোগী সেবার প্রয়োজন হয়, বিত্তশালী রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বাহির থেকে চোখ জুড়ানো উন্নত মানের অবকাঠামো থাকলেও হাসপাতালটি রয়েছে চরম সংকটে। ঔষধ ও চিকিৎসকসহ জনবল অভাব, যন্ত্রপাতি বিকল, অব্যবস্থাপনায় কোনো রকমে চলছে কাগুজের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে স্থানীয়দের, এতে ক্ষোভ বাড়ছে রোগী ও স্বজনদের।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ষাটের দশকে স্থাপিত হাসপাতালটি ২০২১ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে ৫০ শয্যার অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও জনবল অনুমোদন না হওয়ায় ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছিল এ হাসপাতালটি। বর্তমানে ৩১ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে মোট ৩৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন অর্ধেক চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজন সাব-সেন্টার থেকে প্রেষণে এসে এখানে রয়েছেন। সেই সঙ্গে এখানকার কয়েকজন প্রেষণে অন্যত্র কাজ করছেন। ৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুমোদন হলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে হবে ১১৩ জন।
আধুনিক এক্সরে মেশিন চললেও অচল অক্সিজেন লাইন এবং নানাহ অজুহাতে আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিন। যার কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব পরিস্থিতির কারণে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। অভাব রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও জনবলের। এ কারণে স্থানীয় জনগণ সঠিক সময় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং তারা বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে অধিক খরচে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাউনিয়া এলাকা থেকে আসা রোগী নাজমুন্নাহার (৩২) বলেন, আমি গাইনি ডাক্তারের কাছে আসছি, আলট্রাসোনোগ্রাম দিয়েছে। হাসপাতালের আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিন নাকি নষ্ট, তাই বেশি টাকা দিয়ে বাহির থেকে পরীক্ষা করিয়েছি।
গাব্দেরগাঁও এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সুমাইয়া বেগম (৪৮), ইয়াকুব মিয়া (৪০) ও কমলকান্দি থেকে আসা বিল্লাল হোসেন (৩৭)সহ আরো বেশ কয়েকজন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছি রোগ নির্ণয় করে বড় ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে। দু’একটা পরীক্ষা হাসপাতালে করিয়েছি। টাকা নিছে, কিন্তু রিসিট দেয়নি। আলট্রাসোনোগ্রামসহ বাকি পরীক্ষা গুলো বাহিরে করিয়েছি বেশি টাকা খরচ করে। তাও ভালো লাগতো, যদি হাসপাতালে ঔষধ পেতাম। গ্যাস্ট্রিকের ঔষধও নেই হাসপাতালে। মনে হচ্ছে হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ।
আব্দুল আহাদ নামে আরেক রোগী বলেন, আমার অনেকদিন যাবত এলার্জিসহ নানান রোগে ভুগছি। স্থানীয় দোকান থেকে ঔষধ কিনে খেয়েছি, ভালো হয়না। হাসপাতালে এসেছি বড় ডাক্তার দেখাতে, কিন্তু এই রোগের চিকিৎসক নেই। পরে অন্য ডাক্তার দেখিয়েছি, হাসপাতালে ঔষধ নেই, বাহির থেকে ঔষধ কিনেছি। তাহলে এত কষ্ট করে হাসপাতালে এসে কি লাভ হলো?
স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, এখানকার রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যেখানে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। রোগীদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে হলে আগে হাসপাতালটিকে চিকিৎসা করা দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, হাসপাতালে জনবল, চিকিৎসক ও ঔষধ সংকট রয়েছে। সকল বিষয় সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি, আশাকরি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.