ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমাবর্ষণের মধ্যে গাজা উপত্যকায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, উপত্যকার লাখো মানুষ অনাহারের মুখে, শিশুরা কাঁদছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়, আর কিছু না হলে এই সংকট মৃত্যুতে পরিণত হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পূর্ব জেরুজালেম প্রতিনিধি আন্তোয়ান রেনার্ড বলেন, ইসরায়েল কিছু সীমান্ত অস্থায়ীভাবে খুলে দিলেও তা ‘গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল’।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে সামান্য কয়েকটি ট্রাক গাজায় ঢুকতে পেরেছে। রেনার্ড জোর দিয়ে বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে বিদ্যমান খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাই অব্যাহত রাখা দরকার; তা ভেঙে দিলে পুরো গাজার জনগোষ্ঠী অনাহারের মুখে পড়বে এবং আমরা তা ঠেকাতে পারবো না।
জাতিসংঘ আরও জানায়, কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে সেগুলো বিতরণ করা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ গাজার এক নার্স তার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেন, আমরা তপ্ত রোদে তাঁবুর নিচে থাকি, পেটে কিছু নেই। আমার সন্তানরা ক্ষুধায় কাঁদছে। একজন মা হিসেবে আমি অসহায়—না পারছি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করতে, না ক্ষুধা থেকে, না গরম কিংবা পোকামাকড় থেকে।
খান ইউনুসের এক বাবা জানান, আমি ভালো নেই, আমার সন্তানরাও নয়।
গাজা প্রশাসনের দাবি, গত ২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘ক্ষুধানীতির’ কারণে অন্তত ৩২৬ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আরও অন্তত ১৪ হাজার শিশুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে, যদি খাদ্য সহায়তা না পৌঁছায়।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নতুন করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাও ইসরায়েলকে থামাতে পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৫৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৬৮৮ জন আহত হয়েছেন। তবে এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন এবং নিখোঁজদের মৃত বলে ধরা হলে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.