চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ধনাগোদা নদীতে দাঁড়িয়ে আছে বেইলি ব্রীজ। নদীর জলে ভেসে গেল দুপাশের দুই কিলোমিটার রাস্তা। ফসলী জমি ও বসতভিটা নিয়ে আতংকে পাঁচ গ্রামের নদীপাড়ের শত শত পরিবার। বসতভিটা ও ফসলি জমি রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চাঁদপুরের ধনাগোদা নদীর উপরে দাঁড়িয়ে আছে একটি বেইলি ব্রীজ। ব্রীজটি দেখলে বুঝার উপায় নেই, ব্রীজের উপর দিয়ে যানবাহন ও গ্রামবাসীর চলাচল ছিল। ব্রীজটির দুই পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা নদীতে বিলীন।
চাঁদপুর সদরের বিষ্ণুপুর নতুন বাজার থেকে মতলব দক্ষিণের বরদিয়া আড়ং বাজারের কানুদি- বরদিয়া সড়ক ছিল এটি। রাস্তা বিলীন হওয়ার পর এখন ভাঙ্গছে নদীপাড়ের পাঁচ গ্রামের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি। বসতভিটার ভাঙ্গন আতংকে নদীপাড়ের মানুষের কাটছে নির্ঘুম রাত।
বিষ্ণুপুর গাজী বাড়ীর বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ব্রীজ আছে, রাস্তা চলে গেছে। আমরা ৬ জনের পরিবার, একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে আছে, তাদের নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। রাতে কখন ভেঙে পড়ে যায়, তাই সজাগ থাকা লাগে। দিনের মাঝে ঘুমাই।
তার স্বামী আবুল বাসার বলেন, আমরা ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করতেছি। এই পর্যন্ত আমাদের অনেক কষ্টে দিন গেছে। আমাদের এক বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে আরেক বাড়ি ভাঙতেছে। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুরানো কবরস্থান ভেঙেচুরে গেছে। এখনো আমাদের বাড়িঘর সব ভেঙে নিয়ে যাইতেছে। চারটা মসজিদ, তিনটা স্কুল। কানুদি-বহরদিয়া রোড ভেঙে যাচ্ছে। সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ চাই।
দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দুই এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক ছিল এটি। এখন নৌকা আর দূরের পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলে রাস্তাটি পুনরায় সচল করার দাবী এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, আমাদের এখানে রাস্তা ছিল। এখন নদীতে রাস্তা ভেঙে নিয়ে গেছে। ব্রীজটা নদীর উপরে আছে। আমাদের স্থানীয় বাঁধ দিয়ে যেন আমাদের বাড়িঘর আটকানো হয়। ব্রীজটা এখন নদীর মাঝে ভাসতেছে। রাস্তাঘাট সব ভেঙে নিয়ে গেছে নদীতে। আমরা পরিবার নিয়ে অনেক আতংকে আছি। সরকারের কাছে স্থায়ী একটা বাঁধ চাই।
পথচারী গৃহবধূ জান্নাতুন নাঈম বলেন, আগে রাস্তা ছিল, এখন রাস্তা নাই। এই কারনে আমরা অর্ধেক পথ রাস্তা দিয়ে আসছি আর অর্ধেক পথ মানুষের বাড়ি হেঁটে হেঁটে আসছি।
সোহেল প্রধানীয়া বলেন, ওইখান থেকে এইটুক পর্যন্ত ভেঙে নিছে। এখন আমরা সরকারের কাছে বাঁধ চাই। রাস্তা যতটুকু হইছিল আমরা অনেক খুশি হইছি। বেড়িবাঁধ হবে আমাদের বলছে কিন্তু এখনো হয় নাই। সরকারের কাছে আমাদের গ্রামবাসীর আবেদন দ্রুত আমাদের এই ভাঙন রক্ষা করার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দেন- এটা আমাদের আকুল দাবি।
তৎকালীন সময়ে পরিকল্পিতভাবে রাস্তা ও ব্রীজটি নির্মিত হয়নি দাবী করে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এখানে ২.১ কিলোমিটার একটি স্থায়ী প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নকশা প্রণয়নের নিমিত্তে ডিজাইন দপ্তরে পাঠানো হয়। নকশা পাওয়া গেলে দ্রুতই কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন এবং ডিপিপি দাখিল করা হবে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষ্ণুপুর এলাকায় আমরা গত বর্ষায় আমরা যে সমস্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গনের প্রবণতা ছিল এবং বিশেষ করে যেখানে কিছু স্থাপনা আছে স্কুল তারপর বাজার, মসজিদ এবং মন্দির সংলগ্ন যেই জায়গা আছে সেই জায়গাতে আমরা অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করে নদী ভাঙ্গনের প্রবণতা অনেকটাই রোধ করেছি। এর পাশাপাশি আমরা এখানে একটি স্থায়ী ২.১ কিলোমিটার একটি স্থায়ী প্রকল্পের জন্য আমরা ইতোমধ্যে কারিগরি কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা নকশা প্রণয়নের নিমিত্তে ডিজাইন দপ্তরে লিখেছি, তো নকশা পাওয়া গেলে আমরা দ্রুতই কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন এবং ডিপিপি দাখিল করবো এলাকায়।
এই রাস্তা ও চারটি ব্রীজ নির্মিত হয় ২০০৮ সালে, গেলো ৩/৪ বছর ধরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে রাস্তাটি। ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গনের কবলে দুই উপজেলার কানুদি, মনোয়ারখাদী, বিষ্ণুপুর, লালপুর ও বরদিয়া গ্রাম।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.