পড়াশোনার মাঝ পথে প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন চাঁদপুরের বাবুরহাট এলাকার পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী সাহাদাত সরদার। এখন তার মাসিক আয় লাখ টাকার উপরে। তবে মুরগীর বাচ্চার দাম আর ফিডের দাম কমানো হলে লাভের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা তার।
অন্যদিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই এমন সাফল্যে এলাকার তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রেরণা এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
যৌথ পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে প্রবাসে যেতে পাসপোর্ট করা সাহাদাত এখন পোল্টি ফিড ও ফার্মের মালিক। তার অধীনে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। ২০০৫ সাল থেকে ফিড ব্যবসায় জড়িত থাকলেও গেলো ৬ মাস আগে একটি আধুনিক পোল্ট্রি ফার্ম করেন। ফার্ম থেকে এখন মাসিক আয় লাখ টাকার উপরে। তার ফার্মে কাজ করতে পেরে খুশি শ্রমিকেরা।
তার সিয়াম পোল্ট্রি ফার্মের শ্রমিক জানান, ‘আগে ট্রেইলরের কাজ করতাম। ট্রেইলরের কাজ ছেড়ে দিয়ে এই ফার্মে চাকরি নিয়েছি। মুরগির ফার্মে বেতন পাই ১৫-২০ হাজার টাকা। পরিবারের ৪ জন নিয়া এখন সুখে আছি।’
আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ফার্ম পরিচালনা করি। সকালে এসে ৬টার সময় খাবার দেই, পানি দেই, মেডিসিনের প্রয়োজন হলে মেডিসিন দেই। তারপর এই ভূষিগুলো প্রতিনিয়ত নাড়তে হয়। এটা নাড়লে ভূষিগুলো শুকনা থাকলে মুরগির রোগবালাই কম হয়। এভাবে আমরা পরিচালনা করি। আর খাওয়াতে হয় সকালে- দুপুরে- রাতে। আবার ছোটদের এক ধরণের ফিড, বড়দের এক ধরণের ফিড ব্যবহার করছি।’
২০ লাখ টাকা ব্যায়ে আধুনিক পোল্ট্রি ফার্মে রয়েছে টিনসিডে ঝরণার মাধ্যমে তাপ নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা। যা হিট থেকে মুরগীর বাচ্চাকে বাঁচানো যায়। এছাড়া রয়েছে হিট লাইটিং, শীতে তাপ দেয়ার জন্য হিট লাইটিং ও গ্যাস হোপার দেয়ার ব্যবস্থা।
বাবুরহাট দাসাদী গ্রামে এই প্রথম এমন ফার্ম দেখে তরুণদের মাঝে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে বলে জানান এলাকাবাসী।
ফার্মের পাশ^বর্তী বাড়ীর ফারজানা বেগম বলেন, ‘জমিনটা পড়ে আছে। পরে শাহাদৎ ভাই কিনে খামার দিছে আর এখন লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। আমি আমার ছেলেরেও চাই এমন একটা পথ ধরিয়ে দিতে, ব্যবসা দিতে।’
এলাকাবাসীর পক্ষে জাকির হোসেন বলেন, ‘এই খামারটা অনেক সুন্দর করেছেন। এটা প্রযুক্তি নির্ভর খামার। যেটাতে ৭-৮ জন লোক কাজ করছে। সেখানে তারা মোটামুটি প্রতি মাসে ভালো একটা ইনকাম করছে। তাদের দেখায় দেখায় হয়তো আশেপাশের গ্রামের অনেকেই খামার করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।’
এলাকার মুরব্বী লোকমান সরদার বলেন, ‘শাহাদাৎ বিদেশে না গিয়ে আজকে দেশে স্বল্প পুজিঁতে খুব ভালো আছে।’
আধুনিক ফার্মে লেবার কম, খরচ কম, মুরগী ভালো থাকে। ৬ হাজার মুরগীর জন্য ২ বার পানি দিতে হয়। ৪ জনের স্থলে ২ জনেই এখন তা করছে। সূইচ দিলেই পানি উঠে যায়। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে এখন সিয়াম পোল্ট্রি ফার্ম, মেসার্স একতা পোল্ট্রি ফিড ও মাছের প্রজেক্টের উদ্যোক্তা সাহাদাত সরদার। শ্রমিকদের বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচা মিটিয়ে এখন মাসিক আয় লাখ টাকার উপরে তার।
উদ্যোক্তা মো. সাহাদাত সরদার বলেন, ‘এখানে ৬ হাজার মুরগি পালি। ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে, প্রথম ব্যাচে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাভ হইছে, ২য় ব্যাচে ২ লাখ টাকা লাভ হইছে আর এই ৩য় ব্যাচে দেড় লাখ টাকা লাভ হইছে। বাচ্চার দাম আর ফিডের দাম একটু বেশি থাকার কারণে লাভের অংশ কমে গেছে। এই পোল্ট্রি ফার্ম দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এখন আমার আন্ডারে অনেক লোক কাজ করে প্রায় ১০-১২ জন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ফার্মটা আমার নিজের। আমার ফিডের দোকান আছে একতা পোল্ট্রি ফিড নামে ওয়্যারলেস বাজারে। আমি ২০০৫ সাল থেকে ব্যবসা করি। এখন নিজে কিছু প্রজেক্ট দিতেছি। আমার প্রায় ১০০-১৫০ খামারি আছে, তাদের আমি ফিড বাচ্চা দেই এবং আমিই ফিডের ডিলার। কিন্ত ফার্ম চালাতে গিয়ে আমরা সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাই না। সরকারি কোনো ডাক্তার আমাদের এই ফার্মের কেয়ার টেক করে না। কোম্পানীর যে ডাক্তার আছে তাদের নিয়েই আমরা এই ফার্ম পরিচালনা করি।’
উদ্যেক্তা সাহাদাত এখন পুরোদমে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। তিনি চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ড বাবুরহাট দাসাদী এলাকার সরদার বাড়ীর বাসিন্দা। পরিবারে দুই ভাই, পাঁচ বোন আর স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে তার।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. জাকির হোসেন
dailyalokitochandpur@gmail.com, +8801613090707
Copyright © 2025 Dailyalokitochandpur. All rights reserved.